শিরোনাম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গত শুক্রবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদসহ দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হওয়ার পরদিন থেকে নগর ভবনে যাননি, অফিসও করেননি। জরুরি কাজগুলো তিনি তার বাসভবনে থেকেই করছেন। নগর ভবন ও বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তার বাসভবনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সেসব ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সময় মাস্টাররোলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন আতংকে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যে দলীয় পদ হারানোর পাশাপাশি জাহাঙ্গীর মেয়র পদও হারাচ্ছেন। এমন খবরে সিটি করপোরেশনে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা আতংকে আছেন। মেয়র পদ হারালে তাদের চাকরির কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় তারা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয় থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছবিও নামিয়ে ফেলতে দেখা গেছে গত দুই দিন।
জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ হারাচ্ছেন এমন খবরে গাজীপুরের যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে বহুল আলোচিত নবনির্মিত বনমালা সড়কের মাঝখানে স্থানীয়রা বাঁশের খুঁটি দিয়ে আটকে দেন এলাকাবাসী। এ সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী জমির ও ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মঙ্গলবার সকলে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর শহর হয়ে হায়দরাবাদ থেকে টঙ্গীর বনমালা এলাকায় যাওয়ার জন্য রেলওয়ের জমির ওপর দিয়ে একটি সড়ক ছিলো। এক বছর আগে রেলওয়ের ডাবললেন নির্মাণ করার জন্য সেই রাস্তাটি বন্ধ করে রেললাইন স্থাপন করা হয়। এতে গাজীপুরের হয়দারাবাদ ও টঙ্গীর বনমালা এলাকার শত শত বাসিন্দারা বিপাকে পড়ে যান। পায়ে হেঁটে যেতে পারলেও কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।
৬-৭ মাস আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ৪০ ফুট প্রসস্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করে ইটের সলিং করেন। এখানে প্রায় অর্ধশত কবর ছিল সেগুলোও অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।
ওই সময় এলাকাবাসী বাধা সৃষ্টি করলে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রায় ৩-৪ মাস হয়ে গেলেও তারা কয়েক দফা তার কাছে ঘুরেও সেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি যদি মেয়র না থাকেন তাহলে তারা জমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার আশঙ্কায় ফের তাদের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে দুপুর দুইটার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থান্দার কামরুজ্জামান ও গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সহকারী কমিশনার হাসিবুল আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকবাসীকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নগরজুড়ে যেসব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে সরকারি অর্থের পাশাপাশি বৈদেশিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার টাকাও আছে। কাজের গতি আগের মতোই আছে। স্থানীয় জমি বা ভবন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কয়েকটি স্থানে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ওই স্থানীয় সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর জানান, গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রায় বেশিভাগ ওয়ার্ডেই নানা ধরনের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যেসব ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলররা মেয়রের পক্ষের সেখানে কাজের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে আছে।
কারণ হিসেবে এক কাউন্সিলর জানালেন, আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের জমি নিয়ে রাস্তা ও ড্রেন নির্র্মাণ করছি। এখন এলাকায় প্রচার হয়েছে যে মেয়র জাহাঙ্গীর আর মেয়র থাকবে না। নতুন মেয়র আসবে, তিনি রাস্তায় যাওয়া সব জমির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবেন। এ জন্য অনেক স্থানে কাজ থেমে যাচ্ছে। তবে আমরা স্থানীয়দের ম্যানেজ করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, যেসব ওয়ার্ডে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমবিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন সেসব এলাকাতেও উন্নয়ন কাজ কর্ম চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
গত ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ ও দল থকে বাদ দেওয়া হলেও মেয়র পদে থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। গাজীপুরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধীরা তার মেয়র পদ থেকে অপসারণ দাবি করে আসছেন। আর এ বিষয়টি আইনের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয়র সরকার মন্ত্রী।
সূত্র: জাগো নিউজ