শিরোনাম
বাস ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে কয়েক দিন ধরে অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘট পালন করে চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে বেশ কিছু পরিবহন আবার চলাচল করতে শুরু করেছে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বুধবার পর্যন্ত ওয়েবিল বন্ধের দাবিতে পরিবহন চালানো বন্ধ রেখেছিলেন তারা।
তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার নিয়মিতভাবে বাস চালানো শুরু করছেন তারা।
ঢাকার মিরপুরে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, তারা যে পরিবহনে কাজ করেন তাদের মালিকরা ওয়েবিলে আগের ভাড়া চালু করার পর কাজে ফিরেছেন।
বৃহস্পতিবার রাস্তায় বাসের সংখ্যা বুধবারের তুলনায় কিছুটা বেশি চোখে পড়লেও এদিনও বাসের স্বল্পতা ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
ওয়েবিল কী?
মালিকপক্ষ বলছে যে, পরিবহন খাতে ওয়েবিলের প্রচলন বেশ পুরনো। মূলত গাড়ি কোন স্টেশন থেকে কখন ছাড়লো, কতজন যাত্রী ছিল বা কোন ফি দিতে হয়েছে কিনা, সেগুলো জানতেই ওয়েবিল ব্যবহার করা হয়।
ঢাকায় বাস মালিকদের একটি সমিতি, এসোসিয়েশন অফ বাস কোম্পানিজের প্রেসিডেন্ট রফিকুল হোসেন কাজল বলেন, ওয়েবিল প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে চলছে।
এখন এর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঢাকা শহরে ওয়েবিল কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।
কাজল বলেন, আগে ফুটপাতে বুথ বসিয়ে টিকেট কেটে বাসে উঠতে হতো। যার ফলে বুঝা সম্ভব ছিল যে, কোন স্টেশন থেকে কতজন যাত্রী উঠলো।
তবে সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওয়েবিলের মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়।
তিনি বলেন, ওয়েবিল মূলত একটি খাতা। একটি গাড়ির রুটকে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে ওই পয়েন্টগুলোতে কর্মী রাখা হয়। এই কর্মীরা দেখেন যে, ওই পয়েন্টে ওই সময়ে বাসে কত জন যাত্রী ছিল।
যত জন যাত্রী থাকে সেই সংখ্যা দিয়ে ওই পয়েন্ট পর্যন্ত যে ভাড়া সেটি গুণ করেই যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটিই বাসের মালিককে বুঝিয়ে দিতে হয় চালকদের। খাতায় লিখে দেয়া হয় যে, যাত্রী ১০ জন নাকি ২০ জন। এখন এদের মধ্যে কেউ হয়তো ১০ টাকা ভাড়া দেয়, কেউ ৮টাকা। এগুলোই ওয়েবিলে উল্লেখ থাকে বলে জানান কাজল।
তিনি বলেন, "একেক পয়েন্ট পর্যন্ত একেক রকম ভাড়া থাকে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। কখনো যাত্রী কম থাকে, কখনো বেশি। গড়ে একটি ভাড়া আসে।"
ওয়েবিল নিয়ে সমস্যা কেন?
চলতি মাসের শুরুর দিকে, ডিজেলের বর্ধিত দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস ও লঞ্চের জন্য বর্ধিত নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
নির্ধারিত নতুন ভাড়া অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়।
বাসের সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাস ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, ভাড়া বাড়ানোর পর ওয়েবিলের কারণে আসলে নানা ধরণের ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাদের।
এদিকে সরকারের বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে যাত্রীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোর যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী বাস ভাড়া বাড়িয়েছেন মালিকরা।
তবে, বাড়তি ভাড়া আদায় করা নিয়ে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।
একজন পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ উজ্জ্বল বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী ওয়েবিলেও বেশি ভাড়া ধরা হয়।
তিনি বলেন, "ভাড়া বাড়াইছে না মহাজনেরা? এহন ওয়েবিলে যে কয় জন যাত্রী থাকে সেই ভাড়া মহাজনকে বুঝায় দিতে হয়।"
তার অভিযোগ, যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। আর এ কারণেই মালিকদের ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম থেকে হয় তাদের।
"যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। ভাড়া চাইলে মারতে আসে," বলেন তিনি।
এ কারণেই ওয়েবিল বাতিল করার দাবি তোলে তারা।
তবে মালিকপক্ষ বলছে, শ্রমিকদের সাথে তাদের আসলে ওয়েবিল নিয়ে কোন সমস্যা নেই। বরং রাস্তায় নামার পর যাত্রীদের হাতে মারধরের ভয়ে বাস নিয়ে বের হতে চায় না শ্রমিকরা। অঘোষিত ধর্মঘটের পেছনে এটাই বড় কারণ বলে দাবি করেন তারা।
সূত্র: বিবিসি