শিরোনাম
বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় পাঁচটি সরকারি ব্যাংকে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম/প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিচে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
প্রথমত, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস)-র আওতায় গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে পাঁচটি ব্যাংকের ‘অফিসার (ক্যাশ)’ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ছিল আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বিএসসিএস কর্তৃক সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএসসিএস-এর আরও দুইটি পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দেওয়ার জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও পর্যায়ের কোনও কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য ‘সিসিটিভি অপারেটর’ পদে গত ১৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ এবং মো. আলমাস আলীকে ১৩ জুন ২০২১ তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগের সার্বিক বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হবার পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনও নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। এ জাতীয় সেবা ক্রয়ের/গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রচলিত সব বিধি-বিধান স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিপালন নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কোনও পর্যায়ের কোনও কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। অপরদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস) শুধু সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।
হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস) দুইটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট যা দুই জন ভিন্ন ভিন্ন ডেপুটি গভর্নরের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তারা আলাদাভাবে কাজ করেন। তাই এ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একে অপরের কাজে প্রভাবিত করার কোনও এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা-ও সঠিক নয়।
চতুর্থত, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি এবং বহিঃকেন্দ্রে বদলির জন্য স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। বিধান মোতাবেক কেন্দ্র জ্যেষ্ঠতা/আবেদনের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তাকে সাধারণত দুই বছরের জন্য বহিঃকেন্দ্রে বদলি/বহাল করা হয়। সুতরাং ব্যাংকের বহিঃকেন্দ্রে পোস্টিং/বহালের বিষয়টি কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি একটি দাফতরিক রুটিন ওয়ার্ক। তবে, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ কোনও কর্মকর্তার বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে যে কোনও সময় যে কোনও প্রজেক্ট/ বিশেষ কাজে পদায়ন/ সংযুক্ত করতে পারে।
পঞ্চমত, বৈদিশিক মুদ্রার সঞ্চিত রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন্স (জগএ) এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভেস্টমেন্ট কমিটি (আইসি)-র মাধ্যমে। অপারেশনাল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অপারেশনাল ম্যানুয়ালের নির্দেশনার আলোকে। রিজার্ভের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম অডিটও হয়ে থাকে। ফলে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনও একক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনও অবকাশ নেই। একইভাবে রিজার্ভের বিনিয়োগ থেকে কারও পক্ষে ব্যক্তিগত কোনও অনৈতিক সুবিধা গ্রহণেরও সুযোগ নেই। উল্লিখিত নিয়মনীতি ও গাইডলাইন্সের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। রিজার্ভ হতে বিনিয়োগকৃত যাবতীয় অর্থ মুনাফাসহ সঠিক সময়ে আদায় হয়েছে ও হচ্ছে। বিনিয়োগকৃত আসল বা সুদ যথাসময়ে আদায় বা ফেরত না পাওয়ার কোনও দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে অদ্যাবধি ঘটেনি। তাই এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তাও বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক নয়।
ষষ্ঠত, প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়ে সম্প্রতি কতিপয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনেকাংশেই তথ্যভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক নয়। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারেও বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক রয়েছে। নাম উল্লেখ না করে একজন ডেপুটি গভর্নরের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন। ওই সংবাদ প্রকাশের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের কাছ থেকে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছতা বিধানে সব সময় যত্নশীল বলেই প্রতিনিয়ত ব্যাংকের মুখপাত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও এই ধারা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকবে। অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। জাতীয় স্বার্থে এটি কখনও কাম্য নয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন