চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

ফানাম নিউজ
  ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১১:৪৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে জাতিগত বৈচিত্র্য- সবই দেখা যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। দুই হাজার ৩১২ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর। সুদীর্ঘ ৫৫ বছর পূর্ণ করে ৫৬ তে পা রেখেছে দেশের একমাত্র শাটল ট্রেনের প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। পুরো ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে সকাল সাড়ে ১০টায় চবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হবে আনন্দ শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর বেলা ১১টায় কেক কাটা হবে। পরে সাড়ে ১১টায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ। দুপুর ১২টায় আলোচনাসভা ও স্মৃতিচারণ এবং বিকেল ৩টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, অর্থনীতি— এই চারটি বিভাগ এবং সাতজন শিক্ষক ও ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে নয়টি অনুষদে রয়েছে ৪৮টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী ২৭ হাজার ৫৫০ জন এবং বিভিন্ন বিভাগে পাঠদান করছেন ৯০৬ জন শিক্ষক।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নয়টি ছাত্র ও পাঁচটি ছাত্রী আবাসিক হল এবং একটি হোস্টেল রয়েছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারীতে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রথম নারী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চট্টগ্রামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় চট্টগ্রামের মানুষ স্থানীয়ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় সম্মেলনে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি নির্মাণের কথা উপস্থাপন করেন। পরে ১৯৪২ সালে নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি পেশ করেন। ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-১৯৬৫) প্রণয়নকালে চট্টগ্রামে একটি ‘বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালের নির্বাচন প্রচারণায় ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

পরে ১৯৬৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের এক বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করা হয়। একই বছর ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।

বিভিন্ন আন্দোলনে চবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন চবির ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থীসহ তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।

চবি জাদুঘর

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানসহ বিখ্যাত সব শিল্পীর শিল্পকর্ম যা সহজেই একজন শিল্প সচেতন ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অষ্টম থেকে ১২শ শতাব্দীর কষ্টিপাথরের, কাঠের, কাদামাটির ও বিষ্ণুমূর্তিসহ প্রাচীন জীবাশ্মের সংগ্রহ রয়েছে এ জাদুঘরে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর ও সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সমুদ্রসম্পদ জাদুঘর রয়েছে।

গ্রন্থাগার

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক বই ও ৪০ হাজার ইবুকের বিরাট এক সংগ্রহ। আছে বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষায় লিখিত সুপ্রাচীন সব পাণ্ডুলিপি। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে লেখা বইয়ের সংগ্রহে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।

স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য

চবিতে রয়েছে বেশকিছু স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য। তন্মধ্যে, জয় বাংলা ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, স্বাধীনতা স্মৃতি মুরাল, স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভ, মাস্টার দা সূর্যসেন স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু চত্বর উল্লেখযোগ্য।

শাটল ট্রেন

১৯৮০ সালে চালু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে দুটি শাটল ট্রেন রয়েছে যা বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকে চবি রেলওয়ে স্টেশন এবং সেখান থেকে পুনরায় বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াত করে। প্রতিটি ট্রেনেই ৯টি করে বগি যুক্ত রয়েছে।

জীববৈচিত্র্য

জীববৈচিত্র্যে অনন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে রয়েছে ২১৫ প্রজাতির পাখি, ১৭ প্রজাতির ব্যাঙ, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও হরিণ, সজারু, বুনো শুকরসহ প্রায় ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এছাড়া বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষকদের গবেষণাপত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষণাপত্র এবং চবির নিজস্ব গবেষণা পত্রিকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ, বাংলা বিভাগ থেকে প্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রকাশিত ইতিহাস পত্রিকা এবং অর্থনীতি বিভাগ থেকে ইকোনমিক ইকো পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

সূত্র: জাগো নিউজ