শিরোনাম
ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি সামলে উঠছে বাংলাদেশ। এ ভাইরাসে মৃত্যু হ্রাসের পাশাপাশি রোগী শনাক্তের হারও নেমে এসেছে ৫-৬ শতাংশের ঘরে। সেজন্য বাংলাদেশকে করোনা সংক্রান্ত উচ্চঝুঁকির ‘রেড লিস্ট’ থেকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। অনেক আগে বাংলাদেশিদের ওপর দেওয়া ‘রেড অ্যালার্ট’ থেকে যুক্তরাজ্যের এভাবে সরে আসার খবরে ঢাকার কর্মকর্তারা স্বস্তিবোধ করছেন। এখন তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের দিকে তাকিয়ে আছেন, যে দেশগুলো বাংলাদেশের যাত্রীদের ভ্রমণে কড়াকড়ি রেখেছে। বিশেষ করে আরব আমিরাত ভ্রমণের ছয় ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষার যে বাধ্যবাধকতা জারি রেখেছে, তা থেকে তারা সরে আসবে কি-না, সেদিকে নজর রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: জাগো নিউজ
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এতোদিন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে কোনো যাত্রী গেলে তাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টানে থাকতে হতো। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকার শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের ওপর থেকে রেড অ্যালার্ট তুলে নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও রেড অ্যালার্ট তুলে নেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশিদের ওপর থেকে অ্যালার্ট প্রত্যাহার করায় আরব আমিরাতও হয়তো ছয় ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে পারে। এক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো যেভাবে করোনার নেগেটিভ সনদ গ্রহণসাপেক্ষে ভ্রমণের অনুমতি দেয়, তারাও তেমন ভাবনায় পৌঁছাতে পারে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের যাত্রীদের ওপর জারি থাকা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি তুলে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত। করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সেদেশে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের যাত্রীদের। তবে এজন্য ভ্রমণের ছয় ঘণ্টা আগে পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রেখেছে তারা।
সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে আরব আমিরাতের পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স এমিরেটস জানায়, বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নেওয়া হবে না। ফলে এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকার হযরত শাহজালাল, সিলেটের ওসমানী ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানো হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমেকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন একটি শর্ত দেয়া হচ্ছে যে, ফ্লাই করার ৪, ৬ বা ৮ ঘণ্টা আগে যাত্রীকে পিসিআর টেস্ট করতে হবে। সেজন্য দু-তিন দিনের মধ্যে টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ করা হবে।
এখন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি যুক্তরাজ্যের অনুসরণে আরব আমিরাতও নমনীয় হয়, তাহলে বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে।
আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনে ৭ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি
এদিকে প্রবাসী কর্মীসহ বিদেশগামী যাত্রীদের দ্রুত করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপনে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। এ ল্যাবরেটরি স্থাপনে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।
জানা গেছে, বিমানবন্দরে ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য যে স্থানটি (দোতলার পার্কিং এরিয়া) নির্বাচিত হয়েছে তা উপযুক্ত কি না, প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ল্যাব স্থাপন ও পরিচালনা করবে ইত্যাদি বিষয়ে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) শুক্রবার দুপুর ১২টার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই সব প্রতিষ্ঠানের এসওপি আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আজকালের মধ্যেই জবাব আসবে। যুক্তরাজ্যের মতো যদি তারা বাংলাদেশের যাত্রীদের ওপর থেকে যাত্রা শুরুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়, তাহলে বিমানবন্দরে আর ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজন নাও হতে পারে। আর যদি তারা এসওপি পর্যবেক্ষণ করে ল্যাব স্থাপনের ব্যাপারে ইতিবাচক রিপোর্ট দেয়, তাহলে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু করবে।
বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হলে স্টেমজ হেলথ কেয়ারে নমুনা পরীক্ষার খরচ পড়বে দুই হাজার টাকা, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টারে এক হাজার ৮৫০ টাকা, এএমজেড হাসপাতালে এক হাজার ৮০০ টাকা, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই হাজার টাকা, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজে এক হাজার ৭০০ টাকা, গুলশান ক্লিনিকে এক হাজার ৭৫০ টাকা এবং ডিএমএফআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার খরচ লাগবে দুই হাজার ৩০০ টাকা।