শিরোনাম
নোয়াখালীর ভাসানচরে সফরে এসেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তাদের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে জাতিসংঘের দুই সংস্থার যৌথ প্রতিনিধি দলটি তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন।
সোমবার (১ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে দুপুরে তারা ভাসানচরে পৌঁছান। প্রথমদিনের পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় ভাসানচরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) অফিস কক্ষে আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভাসানচরের ক্যাম্প ইনচার্জ নওশের ইবনে হালিম। তিনি বলেন, ভাসানচরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক কাজ হিসেবে জাতিসংঘের টিমটি সেখানে গেছেন।
এর আগে জাতিসংঘ শুরুতে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করলেও সেই অবস্থান বদলে সম্প্রতি ভাসানচরে শরণার্থীদের জন্য কাজ শুরু করতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে গত ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক চুক্তিও করে ইউএনএইচসিআর।
নওশের ইবনে হালিম আরও বলেন, সোমবার ইউএনএইচসিআর ও ডব্লিউএফপি কর্মকর্তারা দুটি দলে ভাগ হয়ে ভাসানচরের ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল, কবরস্থান এরিয়া, হেরা সুপার সপ, ওয়্যারহাউজ ১, ২ ও ৩, নির্মিতব্য ইউএন ভবন ও শেল্টার-১৪ এলাকা পরিদর্শন করেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু হবে উল্লেখ করে নওশের ইবনে হালিম বলেন, সভায় ভাসানচর ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়। তারা খুব দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করবেন।
কর্মকর্তারা জানান, ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। সরকার যে কাজটি এতদিন একা করে আসছিল।
তবে ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং জাতিসংঘ, সহযোগী সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিওকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে সরকার।
ভাসানচর প্রকল্পের উপ-পরিচালক কমান্ডার আনোয়ারুল কবির বলেন, প্রতিনিধি দলটি সেখানে প্রাথমিকভাবে তিনদিন থাকবেন। ভাসানচরে সাপ্লাই চেইন কীভাবে হবে, তাদের অফিস, স্টোরেজ ও মানবিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে তারা কাজ করবেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। চলাচলের সুবিধার জন্য প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি যানবাহনও জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে চাপ কমাতে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় মিয়ানমারের ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ও দেশি-বিদেশি সংস্থাকে যুক্ত করে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়ে শুরু থেকেই জাতিসংঘ বিরোধিতা করেছে। ভাসানচরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন তারা। তবে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু করে অব্যাহত রাখার একপর্যায়ে সেখানে একটি কারিগরি দল পাঠায় জাতিসংঘ।
এছাড়া ওআইসি, ঢাকায় পশ্চিমাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পর ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার ভাসানচর সফর করেন। এরপর জাতিসংঘের কারিগরি দলসহ প্রতিনিধিদল ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়।
সূত্র: জাগো নিউজ