শিরোনাম
খুলনায় মোবাইলে কথা বলায় সন্দেহ করে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে (২৫) পুড়িয়ে হত্যার দায়ে তার স্বামী রফিক শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় ৫০ হাজার টাকা জারিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর একটি ধারায় তাকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার দুপুরে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে আসামি রফিক শেখের সঙ্গে ফকিরহাট উপজেলার হালিমা বেগমের ছোট মেয়ে মরিয়মের বিয়ে হয় ২০১৭ সালে।
মোবাইলে কথা বলায় তাকে সন্দেহ করত স্বামী। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বিবাদ লেগেই থাকত। একপর্যায়ে তারা উভয় নেহালপুর থেকে ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা এলাকায় রকি শেখের ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠে। সেখানে এসেও স্ত্রীর ওপর একই অভিযোগে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট দুপুর ১২টায় বাড়ি এসে রফিক তার স্ত্রীকে না পেয়ে সন্দেহের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাইরে থাকার কারণ জানতে চান তিনি। উত্তর দিতে না পারায় স্ত্রীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে স্বামী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, একই দিন সকালে রফিক রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের দীপক দাসের পানের বরজের মধ্যে পেট্রল ও একটি বস্তার মধ্যে কয়েকটি ইট রেখে আসে। রাতে বেড়ানোর কথা বলে দুজন রূপসা ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে। রাত ১০টায় উভয় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রফিক পানের বরজের সামনে এনে ছলনার আশ্রয় নিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিকটিমকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরিয়মের শরীরে বস্তা পেঁচিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এর পর আসামি রফিক শেখ বাড়ি ফিরে গিয়ে মরিয়মের মাকে প্রতিবেশী রঞ্জন বৈরাগীর মাধ্যমে জানায়, মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মরিয়মের মা সম্ভাব্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিতে থাকে। এর দুদিন পর তার অর্ধগলিত ও পোড়া মরদেহ পাওয়া যায় রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে দীপকের পানের বরজের মধ্যে। এ ব্যাপারে নিহতের মা রূপসা থানায় ১৪ আগস্ট বাদী হয়ে রফিক শেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শাহাবুদ্দিন গাজী রফিক শেখকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় ১৫ সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণেরর মাধ্যমে আসামি দোষী সাব্যস্ত হয়। বিচার শুরুর ৯ কার্যদিবসের মধ্যেই এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করলেন খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।