শিরোনাম
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে মন্দির, পূজামণ্ডপ, দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জামায়াতের নেতাসহ আরও ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বেগমগঞ্জ, সদর, চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় সেখানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রায়হান (৩৮), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল ইমাম ওরফে কমল (৩৯), জামায়াত-সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ (৪৮), সদর উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল বারী চৌধুরী (৪৫), একই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্যসচিব বেলায়েত হোসেন (২৬)।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার মূল উসকানিদাতাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফয়সাল ইমামকে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনার পর তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক পোস্ট করেন এবং সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকজনের কাছে শেয়ার করেন। এ ছাড়া চৌমুহনীতে হামলা-ভাঙচুর চলাকালে ফয়সাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর ফয়সাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার উসকানিদাতাদের মধ্যে আরও কয়েকজন সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুপার বলেন, সরকারবিরোধী গোপন বৈঠক, সরকার হঠানোর জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগসহ আরও একাধিক অভিযোগে জামায়াত-সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে তৌহিদী জনতার নামে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণসহ মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় অপর নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ফয়সালের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে হারুনসহ অন্যদের মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার ফয়সালকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আদালতে হাজির করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে ক্ষমতাসীন দলের তালিকা ধরে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে দলের নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান পরিচালনা করছে এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলের একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপি নেতার এমন অভিযোগের বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করছে। এ পর্যন্ত যাঁদের গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা হয়েছে, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বেগমগঞ্জে বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জন এজাহারভুক্ত আসামি এবং ৭১ জনকে সন্দেভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।