শিরোনাম
কর্ণফুলী নদীর ওপর শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে নবনির্মিত ওয়াকওয়ে পথচারীদের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতুর দক্ষিণ পাশ দিয়ে বিশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত ছয় ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে পারছেন পথচারীরা। ফলে ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পেলেন বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু জাফর মিঞা বলেন, বুয়েটের পরামর্শে দৃষ্টিনন্দন কালুরঘাট সেতুর ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজটি শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে মানুষের চলাচলের জন্য তা খুলেও দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীও নতুন ওয়াকওয়ে দেখতে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, ওয়াকওয়ের নদীর পাশের অংশে সাড়ে চার ফুট উচ্চতার রেলিং রয়েছে এবং রেললাইন অংশে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার রেলিং স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় রেললাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও পথচারীদের কোনো সমস্যা হবে না। সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে যাতে মানুষ ওয়াকওয়েতে যেতে না পারে, সেজন্য সেতুর উভয় দিকে তিনটি করে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, খুলে দেওয়ার পর থেকে রেলিংয়ের ওপর অনেক তরুণকে বসে গল্প করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে ওয়াকওয়ে দিয়ে অনেকে সাইকেল নিয়েও চলাচল করছেন। এতে পথচারীদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমন যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান বলেন, যেহেতু ওয়াকওয়ে দিয়ে উভয় পাশের পথচারীরা চলাচল করবে, তাই সাইকেল বা মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নদীতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এজন্য পথচারীদের সচেতন হতে হবে।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু জাফর মিঞা বলেন, রেললাইনের মধ্যে কার্পেটিংয়ের কাজ চলমান। আশা করা যায় জুলাইয়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপরই কালুরঘাট সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি জানান, সেতুর দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য সেতুর উভয় অংশে আট ফুট উচ্চতার ব্যারিয়ার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে বড় গাড়িগুলো সেতুর ওপরে উঠতে পারবে না। এছাড়া কার্পেটিংয়ের কারণে যাতে সেতুর পাটাতন নষ্ট হয়ে না যায় সে জন্য সেতুতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বুয়েটের নির্দেশনায় আমরা রেললাইনের ফাঁকের নিচে একটি প্লাস্টিকের পাইপ রেখেছি। পানি এ পাইপ দিয়ে নদীতে চলে যাবে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর দাঁড়িয়ে প্রায় শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু। বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের কয়েক লাখ মানুষের শহরে যাতায়াতের মূল মাধ্যম এই সেতুটি। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংস্কারের জন্য সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধের প্রথমদিন থেকেই মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
প্রায় ১০০ বছর বয়সী কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলে। একমুখী সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে আরেকপাশ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। ১৯৯১ সাল থেকে প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে প্রার্থীদের প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতিতে গুরুত্ব পেয়ে আসছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেতুর দাবি আরও জোরালো হয়। ২০১৪ সালে আন্দোলন শুরু করে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’। নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিন দফায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল ২০১৯ সালে মারা যান। এরপরের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদও ২০২৩ সালে মারা গেছেন।
সর্বশেষ একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ সালাম।