শিরোনাম
দীর্ঘদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর বাজারে চালের দাম বেড়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর পাইকারি বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় মোটা ও চিকন চাল কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খুচরা বাজারে চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট মানভেদে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৮ টাকা ও নাজিরশাইল মানভেদে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী ও চালকলের মালিকরা বলছেন, মিল মালিকদের এবার কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি দামে ধান কিনতে হয়েছে। এতে তারা নতুন করে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বাজারে চাল ছাড়ছেন।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিলারদের কারসাজিতে নতুন করে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে। নানা অজুহাতে মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও চালের দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নতুন ও পুরনো চাল বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে এক সপ্তাহে চিকন ও মোটা চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল পাইকারিতে মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে প্রতি বস্তা বিক্রি হয় দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৭৫০ টাকায়। চিকন চাল (মিনিকেট) বস্তাপ্রতি মানভেদে বিক্রি হয় তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকায়। নাজিরশাইল চাল মানভেদে বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) এক হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম বলেন, নির্বাচনের এক দিন পর মিলাররা হঠাৎ কারসাজি করে চালের দাম বস্তায় ২৫০ টাকার বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
এতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বেড়েছে। সাধারণত যখন চালের দাম বাড়ে, তখন এক লাফে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বাড়ে। কিন্তু এবার এক লাফে বস্তাপ্রতি প্রায় ৩০০ টাকার মতো বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলাররা।
এ ব্যাপারে রাজধানীতে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দামে ধান কিনতে হয়েছে মিলারদের। এতে চালের দাম বাড়তি। মিলাররা বস্তাপ্রতি চাল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
বাড্ডার বাজারে বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আমন মৌসুম সবেমাত্র শেষ হলো, এরই মধ্যে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম কয়েক দফা বাড়লেও চালের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল ছিল। নতুন করে চালের দাম বাড়ায় আমাদের জন্য তা বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াল।’ বাজারে সরকারের নজরদারি তেমনভাবে না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর আমনের উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে আমনের চাল সরবরাহও হয়েছে ডিসেম্বরের শুরু থেকে। এখন এই সরবরাহ পুরোদমে থাকলেও মিল পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরায় চালের দাম বেড়ে গেছে।
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় এক কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর বা সাড়ে ৯৭ শতাংশ জমির ধান। এখান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২.৯৮ টন। গত বছরের শেষ দিকে পোকামাকড় এবং ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান।
এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির কার্যক্রমও। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমবারের মতো সরকারের এই সংস্থা তাদের পণ্যে চাল যুক্ত করেছে, যা অনেক কম মূল্যে পাচ্ছে ক্রেতারা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে চাল বিতরণ হয়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সরকারি বিতরণ বাড়ায় চাল বিক্রি কমে গেছে। এ কারণে কয়েক মাস চালের দাম না বাড়লেও মিল পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে এখন দাম বাড়ানো হচ্ছে।
চালকল মালিকরা বলছেন, এবার আমনের মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকেই তাঁদের বাড়তি দামে চাল কিনতে হয়েছে। এতে তাঁরা আগের চেয়ে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বাজারে চাল বিক্রি করছেন।