শিরোনাম
বাংলাদেশের ওপরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নৈতিক অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তবে রাজনৈতিকভাবে দেশের ওপরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটা কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সমাধান করতে হবে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন নিটওয়্যার পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, আইএলও কনভেশনে ট্রেড ইউনিয়নের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেই ১৯৭৪ সালে এটাতে সই করেছেন। আমেরিকা, চায়না, ভারত এবং আমাদের তৈরি পোশাকের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম এখনো আইএলও কনভেশনে সই করেনি। শ্রমিকদের অধিকার প্রশ্নে কোর বা ফান্ডামেন্টাল কনভেনশনালে আটটার মধ্যে মাত্র দুটোতে সই করেছে আমেরিকা। যেখানে বাংলাদেশ সবগুলোতেই সই করেছে।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি আরও বলেন, আমেরিকা কোন অধিকারে, কোন নৈতিক অধিকারের বলে শ্রম অধিকার ইস্যুতে কথা বলে। কোনো অবস্থাতেই এই প্রশ্নে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা ডিউটি বাড়ানোর অধিকার নেই। তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো পদক্ষেপ যদি আমেরিকা নেই, তাহলে সেটা কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা মালিকরা সরকারের পাশে থাকবো।
ইনস্টিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টের (আইটিইটি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের শিল্পের অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের শ্রম অধিকারের উন্নতি হয়েছে। যতোগুলো শ্রম আইন সংশোধন হয়েছে তার সবগুলোই শ্রমিকদের পক্ষে গেছে।
তিনি বলেন, রপ্তানির টার্গেট নিয়ে ভালো করছে আমাদের শিল্প। তৈরি পোশাক খাত ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। প্রতিযোগী অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। সামনে সক্ষম দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীন ও ভিয়েতনাম রয়েছে। এর মাঝে পত্রিকায় যখন দেখি নেতিবাচক নিউজ, তখন শঙ্কা তৈরি হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ শ্রমিকদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে। আমরা সবসময় চাই শ্রমিকরা ভালো থাকুক।
পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা আগেই শঙ্কা করেছিলাম ২০২৩ সাল ভালো যাবে না। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি এখনো শেষ হয়নি। ফলে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। ক্রয় ক্ষমতা কমে যায় ক্রেতার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মানি সাপ্লাই কমানো ও সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশের গ্রোথ নেগেটিভ হয়। এরপর আমরা পজেটিভ ধরে রাখতে সক্ষম হই, আগামীতেও সেটা ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির টার্গেট নিয়ে কাজ করছি যেখানে সুদহার কমানো প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা শ্রম আইন মানছি না এটা সত্য না। আমরা কোনো শ্রম আইন লঙ্ঘন করিনি। এটা যাতে লঙ্ঘন না হয় সে নিয়ে কাজ করছি। শ্রম ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণ নেই, সেটা হবে না। পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে আমেরিকার কংগ্রেস সদস্যরা পোশাকের মূল্য বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমরা ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করেছি। এখন ক্রেতাদের উচিত মূল্য বাড়ানো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. সুবোধ দেবনাথ বলেন, আমাদের এখন ব্র্যান্ডিং করতে হবে। ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। দূতাবাসগুলোকে বিজনেস ডিপ্লোম্যাসির কাজ করতে হবে। পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এসব করতে পারলেই আমাদের নতুন বাজারের রপ্তানি আসবে আরও বেশি।
ঢাবি অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, আমাদের বিশ্বের ১০টি শীর্ষ কারখানার মধ্যে ৯টিই বাংলাদেশে। সবুজ কারখানার ২০৬টি এখন আমাদের দেশে। তাহলে ক্রেতার কাছে সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপন করতে হবে। দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে হবে। আমাদের পোশাক খাতের মিড লেবেল কর্মকর্তারা বাইরে থেকে আসেন। আমাদের ইউন্সটিটিউটকেও দক্ষ করতে হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অ্যাপারেল নিউজের সম্পাদক অমিত কে বিশ্বাস।