শিরোনাম
বাংলাদেশের পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে এক দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশুদের শৈশবের বিকাশ, মাধ্যমিক শিক্ষা, নদীতীর সুরক্ষা এবং নাব্য, শহুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য এবং গ্যাস বিতরণ দক্ষতায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব শরিফা খান ও বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক চুক্তিতে সই করেন।
পাঁচ প্রকল্পের আওতায় এক দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৮১ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।
ঋণচুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করছে। নতুন প্রকল্পগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিশুদের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত বির্নিমাণে কাজ করবে।
যেসব প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
‘বাংলাদেশ এনহ্যান্সিং ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড বেনিফিটস ফর আর্লি ইয়ারস প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে ২১ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। প্রকল্পের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ বা দরিদ্র পরিবারের প্রায় এক দশমিক ৭মিলিয়ন গর্ভবতী নারী এবং ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের মায়েদের নগদ অর্থ দেওয়া হবে। এসব কাউন্সেলিং পরিষেবা দেওয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশের উন্নতিতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক।
‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন অপারেশন’ প্রকল্পে ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন শিক্ষার ক্ষতি পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবিলায় সহায়ক হবে প্রকল্পটি। এই প্রকল্প ক্লাসের শিক্ষার সঙ্গে অনলাইন শিক্ষার প্রবর্তন করবে। ঝরে পড়ার হার কমাতে ৮ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। ৫ হাজার স্কুলে সক্রিয়ভাবে যৌন হয়রানি ও প্রতিরোধ কমিটি নিশ্চিত করবে প্রকল্পটি।
যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ১০ দশমিক ২ কোটি ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। যমুনার নদীতীর সুরক্ষা এবং নাব্য উন্নত করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। নদীতীর ক্ষয় এবং বন্যা থেকে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি রক্ষা করবে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুতি থেকে বাঁচাবে প্রকল্পটি। নদীতীরের বাসিন্দাদের জীবিকা ও সম্পদ রক্ষা করবে। নদীর পর্যাপ্ত গভীরতার সঙ্গে নেভিগেশন চ্যানেলগুলো উন্নত করবে, যার ফলে সারা বছর বড় কার্গো জাহাজ চলাচলে সহায়ক হবে। অভ্যন্তরীণ পানি পরিবহন ও বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করবে এই নৌপথে।
নগর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রকল্পে ২০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সাভার ও তারাবো পৌরসভায় বাস্তবায়িত হবে। ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগসহ সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসা, প্রতিরোধের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করবে। মশা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগকেও সহায়তা করবে। এটি নারীদের জন্য প্রসবপূর্ব পরিষেবা উন্নত করতে সাহায্য করবে। আড়াই লাখ গর্ভবতী নারী এ পরিষেবা পাবেন।
প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ খাতে ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। গ্যাস ব্যবহার দক্ষতা উন্নত করবে এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার আরও সাশ্রয়ী করবে এই প্রকল্প। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে এক দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রিপেইড গ্যাস মিটার এবং উন্নত মনিটরিং সিস্টেমে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং গৃহস্থালী ও শিল্প ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাস বিল কমাতে প্রকল্পটি অবদান রাখবে।