শিরোনাম
দেশে চরম ডলার সংকট চলছে। সংকট নিরসনে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় ডলার আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রণোদনা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে প্রতি ডলার রেমিট্যান্স থেকে প্রবাসীদের স্বজনরা পাচ্ছেন বাড়তি ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দাম হয়েছে ১১৬ টাকার কিছু বেশি। যা খোলাবাজারের চেয়ে বেশি এবং হুন্ডি দরের প্রায় কাছাকাছি।
সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডি (অবৈধ পথ) এড়িয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্সে নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছে তারা। যা ডলার সংকট কমিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২৭ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১৩৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে প্রথম ২৭ দিনেই গত মাসের তুলনায় ৩১ কোটি ডলার বেশি এসেছে। প্রতি ডলারের আগের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দুই গুণ বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ করায় রেমিট্যান্স বেড়েছে এমনটা বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাবের কর্মকর্তারা।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনিতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, প্রণোদনা বাড়ানোয় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ার কথা। রেমিট্যান্স বাড়লে আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হবে। অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে ডলার যেন নামে-বেনামে এদিকে সেদিক না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
প্রবাসী আয়ে সরকার প্রথমে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিল। এরপর সেটা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ বেশি দামে ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স এলে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন প্রবাসী বা তাদের স্বজনরা। সব মিলিয়ে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১১৬ টাকার মতো। আগে প্রতি ডলারে মিলতো সর্বোচ্চ ১১১ টাকা।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯ দশমিক ৫০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এর আগে গত ২০১৯ সালের মে মাসে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এসেছিল।
অন্যদিকে সংকটের মাঝে রেমিট্যান্স কমাকে ভালো চোখে দেখছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, গত দুই বছরে কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন ২০ লাখ প্রবাসী কর্মী। দেশের বাইরে প্রবাসী বাড়ছে, অথচ রেমিট্যান্স কমছে দিন দিন। এর কারণ খুঁজে সমাধানের দাবি তাদের।
এর আগে গত জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। রেমিট্যান্স প্রবাহে একক মাস হিসেবে যা ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। যা এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।