শিরোনাম
এমন নয় টাইগারদের বিশ্বকাপে দল সাজানো নিয়ে আগে কখনো কোনো হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়নি। হয়েছে। ইতিহাস জানাচ্ছে, সেই ১৯৯৯ সালের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার সময় থেকেই দল নির্বাচন নিয়ে একট বড় ধরনের ‘গুবলেট’ হয়েছে।
সে সময়ের সেরা ব্যাটার মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে ছাড়াই সাজানো হয়েছিল দল। পরে ভক্ত-সমর্থক ও সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগী মহলের আন্দোলন-সংগ্রাম আর বোর্ডের উর্ধ্বতন মহলে রীতিমত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিকেএপিতে বোর্ড মিটিং করে নান্নুকে দলে ঢোকানো হয়। এবং তিনিই শেষ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের রূপকার হন।
এরপর ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ আর ২০১৯-প্রায় প্রতিবার দল সাজানো আর ক্রিকেটার নির্বাচন নিয়ে কোনো না কোনো হট্টগোল, হৈ চৈ হয়েছে।
এর মধ্যে ২০১১ সালে ঘরের মাঠে হওয়া বিশ্বকাপে এক নম্বর পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ফিটনেসের দোহাই দিয়ে না নেওয়া নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি।
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু ফিটনেস কম এই অজুহাতে তাকে বাইরে রেখেই দল সাজানো হয়। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হন মাশরাফি। লাখো মাশরাফি ভক্ত নীরবে অশ্রু ফেলেন।
এবারও দল গঠন ও ক্রিকেটার নির্বাচন নিয়ে রীতিমত এক নাটক হলো। যা আসলে ‘প্রহসনের’ শামিল। অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে তামিমকে বাদ দিয়েই গড়া হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বলে দিলেন, তামিমের ফিটনেস নিয়ে তারা সংশয়ে ছিলেন। এখনও সংশয়ে আছেন। তার অবস্থা বিশ্বকাপ খেলার মত না। তাই নেওয়া হয়নি।
তামিমকে বিবেচনায় না আনার পেছনে হেড কোচ হাথুরুসিংহে আর সাকিবই শুধু না, মেডিকেল কমিটি, ফিজিও, ট্রেনারদের মতামতও নাকি গুরুত্বসহকারে শোনা হয়েছে। এবং প্রধান নির্বাচক বোঝাতে চাইলেন, সবাই তামিমকে না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কিন্তু এদিকে বুধবার বিকেলে জাতীয় দল ভারত যাওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় তামিম তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে অনেক কথাই জানালেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও আলোড়িত তথ্য হলো, বোর্ডের এক শীর্ষ কর্তা নাকি তাকে ফোন করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকার কথা বলেন এবং এক পর্যায়ে তাকে ওপেন না করে মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে খেলার প্রস্তাবও দেন। তামিম বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আসলে তিনি প্রতিহিংসা আর ষড়যন্ত্রের শিকার।
এদিকে দেশ ছাড়ার আগে আবার সাকিব আল হাসান এক স্পোর্টস চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি তামিম ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।
মোদ্দা কথা, তামিমের বাদ পড়া নিয়ে এখন রীতিমত কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছে। প্রধান নির্বাচক তার মত করে কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তারপর তামিম আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। আবার সাকিব পাল্টা যুক্তি খণ্ডন করেছেন।
সব মিলে একটা অস্বাভাবিক বিস্ফোরণমুখ অবস্থা। একটা দল বিশ্বকাপ খেলতে গেছে সেই দলের অধিনায়ক, বাদ পড়া এক নম্বর ওপেনার রীতিমত বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হন, ভাবা যায়!
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা আগে ঘটেনি কখনও। দল সাজানো ও ক্রিকেটার নির্বাচন নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে। সমালোচনার ঝড় বয়েছে। কিন্তু একটা সময় সেই কালো মেঘ কেটে গেছে। অস্থিরতা কমে পরিবেশ হয়েছে শান্ত।
এবার তার ছিঁটোফাটা নেই। একটা ছন্নছাড়া অবস্থা। আর বিশ্বকাপের আগে মাঠের পারফরম্যান্সটাও হতচ্ছিরি, শ্রীহীন। এরকম অগোছালো, উত্তপ্ত পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কখনই বিশ্বকাপ খেলতে যায়নি।
দেশ ছাড়ার মাত্র ১৮ ঘণ্টারও কম সময় আগে দল ঘোষণা করা হলো। সে দল সাজানো, ক্রিকেটার নির্বাচন ও ঘোষণা নিয়েও রাজ্যের অনিয়ম। অব্যবস্থাপনা। অদক্ষতা। অদূরদর্শিতা। সেটাই শেষ নয়।
একটা আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনও হলোনা সেভাবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে দায়সাড়াগোছের এক ফটোশ্যুট হলো। অনেক আশা আর স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে দেশের মাটিতে হলো না কোনো অফিসিয়াল প্রেস মিট।
এরকম হতচ্ছিরি অবস্থা কে দেখেছে কবে? অথচ অনেকের চোখে এবারই বাংলাদেশের সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফিসহ অনেক নামি ও বড় ক্রিকেট ব্যক্তিত্বও এবার বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় দল হিসেবে চিহ্নিত ও অভিহিত করেছিলেন।
অনেকেরই স্বপ্ন ছিল, পাশের দেশ ভারতে বিশ্বকাপ। পরিেিবশ-পরিস্থিতি সব প্রায় নিজ ঘরের মতই। বিশ্বকাপের মত বড় আসরে সবচেয়ে ভালো করার এটাই সর্বোত্তম ক্ষেত্র ও অনুকূল পরিবেশ।
কিন্তু হায়! টিম বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গেলো সাফল্যের স্বর্গ শেরে বাংলায় কিউইদের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে নাকাল হয়ে। তারচেয়েও বড় অস্বস্তি হয়ে রইলো, মাঠের বাইরের অস্থিরতা। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার বেলুনটা যেন মাঠে নামার আগেই ফুটো হয়ে গেলো!