শিরোনাম
অধিকার-মর্যাদা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চেয়ে মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কাছে চিঠি দিয়েছেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা।
বুধবার (১২ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে চিঠিটি দেওয়া হয়।
চিঠিতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচআর) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুবায়েরের সই রয়েছে। ক্যাম্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আদিবাসী জাতি। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছি। আমাদের নিজস্ব জন্মভূমি থাকলেও অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয়ে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এখানে আশ্রয়ে আছি। আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা, কারণ এটি একটি ছোট দেশ।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের বেসামরিক নাগরিকদের ধন্যবাদ জানাই। তারা আমাদের কঠিন সময়ে তাদের অসুবিধা না ভেবেই রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছেন। তারা আমাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করতে দ্বিধা করেননি। সেজন্য তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। মূল্যবান সময় ব্যয় করে শরণার্থী শিবিরে আমাদের দেখতে আসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।’
নিজেদের মিয়ানমারের আদিবাসী জাতি দাবি করে রোহিঙ্গারা বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। অথচ তারা এখন অস্বীকার করছে যে, আমরা মিয়ানমারের জাতি নই। তারা সংসদের রেজিস্টার থেকে আমাদের জাতীয়তা বাতিল করেছে। মিয়ানমার সরকার ও কিছু বৌদ্ধ রাজনীতিবিদ একতরফা খেলা খেলছে। বিশ্ব নীরব থেকে আমাদের খেলা দেখছে কিন্তু ইউনাইটেড (যুক্তরাষ্ট্র) তা নয়।’
‘তাই আমরা রোহিঙ্গা জনগণ আশা করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত আমাদের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ কাজ করবে। আমরা রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জবাবদিহিতা, মানবাধিকার নিয়ে আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ক্যাম্পে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটা চিঠি দিয়েছি। চিঠিটি আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
১০ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে উজরা জেয়া ও দক্ষিণ-মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর, বিশেষ সহকারী ব্রায়ান ওয়াকলি, স্টাফ সহকারী ক্যাথরিন হেরেটিক, সিনিয়র মানবিক উপদেষ্টা লিন্ডসে হার্নিশ, মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আমেনা ইসলাম, মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রবার্ট রবেইরো ও সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জান-লিন্ডেন মিলান। সঙ্গে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডেভিড হাস।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের জানিয়েছি, আমরা মর্যাদা নিয়েই দ্রুত দেশে ফিরতে চায়।’
৮ এপিবিএনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরকে ঘিরে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারিসহ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রতিটি ক্যাম্পের প্রবেশমুখে চলে তল্লাশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেওয়া হয় বাড়তি সতর্কতা।
গত ৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালেই এবাদুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে (মাঝি) হত্যা করা হয়। এর দুদিন পর ৮ জুলাই রোহিঙ্গাদের দুই সশস্ত্র সংগঠন আরএসও ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন আরও পাঁচজন। এদিন সন্ধ্যায় আরও এক রোহিঙ্গার গলাকাটা মরদেহের সন্ধান মেলে। এর পরদিনই পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা যায় এক রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত। এসব ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনই সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলো মার্কিন প্রতিনিধি দল।