সিলেটসহ ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ

ফানাম নিউজ
  ২১ জুন ২০২৩, ০২:০৪

সিলেট, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নতুন করে আরো কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- 

সিলেট : বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে নদনদীর পানি। ইতোমধ্যে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সুরমার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানিগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, গতকাল সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৩ সে.মি.। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড কার হয়েছে ১০.৩১ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সে.মি.।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে জেলায় ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে ফের বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ৪-৫ দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই বসতভিটার আসবাবপত্র সরিয়ে নৌকায় করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

পানি উন্নয় বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নদীর পানি বেড়েছে।

এদিকে ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরের জামান চৌধুরী জানান, বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

লালমনিরহাট : তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী এলাকায় রাস্তা ডুবে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গরু-ছাগল ও পোষাপ্রাণী নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি লোকজন। পানি না কমলে খাবার ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়বে হাজারো মানুষ। জানা গেছে, ডালিয়া পয়েন্টের ভাটি এলাকায় নতুন করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়ছে। এখনো ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ না করলেও তলিয়ে গেছে পটল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানতে পেরেছি।

নীলফামারী : সম্প্রতি তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করলেও তিস্তাপারের মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের পাশাপাশি সেখানে নদী ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। রবিবার রাতে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর সোমবার সকালে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি দশমিক ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর দুপুর থেকে পানি আরো কমতে শুরু করে। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি পানির গেট খুলে দেয়া হয়।