শিরোনাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডলার সংকটে পড়ে দেশ। এসময়ে ডলার সাশ্রয়ের নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না। বরং আমদানি বিল পরিশোধে প্রতিনিয়তই রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিশেষত, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও ১১৮ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে। এতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী গণনা করায় রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ৫ দশমিক ৫ বা সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে বর্তমানে দেশের ব্যবহারযোগ্য মোট রিজার্ভের পরিমাণ হবে ২৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে ওই বছরের শেষ দিকে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালের জুনে রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। করোনাকালীন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। এরপর ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে আসে। ডলারের দাম নির্ধারণে দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনকে (বাফেদা)। এতেও সংকট কমার পরিবর্তে গত বছরের মার্চ থেকে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ডলারের মজুতও দ্রুত কমতে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও সংকট কাটছে না। ডলার বিক্রিসহ অন্য খাতে ব্যয় কমাতে না পারলে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বেই। এসব কারণে চাপ কাটছে না দেশের অর্থনীতিতেও।
আকুর সদস্যভুক্ত দেশের মধ্যে রয়েছে- ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। শ্রীলংকার অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় তারা আকু থেকে বেরিয়ে গেছে। সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর আমদানি বিল পরিশোধ করে থাকে।
এতদিন প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা আর রপ্তানি আয়ে ছিল ১০৫ টাকা। এরই মধ্যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আবারও ডলারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবিবি ও বাফেদা।
গত ৩০ এপ্রিল এবিবি ও বাফেদার এক ভার্চ্যুয়াল সভায় ডলারের দাম আরেক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে দাম পাবেন ১০৮ টাকা, যা আগে ছিল ১০৭ টাকা। একইভাবে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৬ টাকা, যা আগে ছিল ১০৫ টাকা। নতুন এ সিদ্ধান্ত গত ১ মে থেকে কার্যকর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাফেদা চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।