শিরোনাম
জনসমুদ্রের ইতিহাস গড়ল যশোরবাসী। আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্বাচনি জনসভা’ উপলক্ষ্যে শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে স্মরণকালের বড় সমাবেশে মানুষের স্রোত নেমেছিল। কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
সঙ্গে পাশের ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শুধু জনসভাস্থলই নয়, গোটা যশোর শহর পরিণত হয়েছিল জনারণ্যে। প্রতিটি রাস্তা ও অলিগলিতে ছিল মানুষ আর মানুষ। ৫০ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভার পর এটিই স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা। যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন তারই কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শামস উল হুদা স্টেডিয়ামে লোক আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগমও বাড়তে থাকে। বেলা ১২টার দিকে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। এতে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে যশোর আসেন। প্রথমে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি যশোরে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’-এ যোগদান করেন। পরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা মঞ্চে আসেন। এ সময় নেতাকর্মীদের স্লোগানে জনসভাস্থল প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। মঞ্চে উঠেই হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।
এই জনসভায় শুধু যশোর নয়, খুলনা বিভাগের প্রায় সব জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখতে হাজির হয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। মিছিল নিয়ে জনসভায় উপস্থিত হন, যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন, যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪, যশোর-৫ আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য।
এছাড়াও মাগুরা থেকে প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী একটা বহর নিয়ে আসেন জনসভায় আসেন মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শেখর, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দারের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল আসে জনসভাস্থলে।
রং-বেরংয়ের গেঞ্জি পরে আর লাল-সবুজ রংয়ের শাড়ি পড়ে নেতাকর্মীরা আসেন। অনেকে ব্যাগে করে দুপুরের খাবারও নিয়ে আসেন। স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের অনুসারীদের ছবি সংবলিত গেঞ্জি পরে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় জড়ো হন। সব বয়সি মানুষদের ভিড়ে তরুণদের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো। তারুণ্যের দৃপ্তকণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হতে থাকে ‘উন্নয়নের সরকার বারবার দরকার। আওয়ামী লীগ সরকার আরেক বার দরকার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য শুকুর আলী জনসভাস্থলে হাজির হন সকাল ৯টার মধ্যেই। কাকডাকা ভোরে যশোর শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের শার্শার ডিহি ইউনিয়ন থেকে রওয়ানা হন তিনি। শুধু কাছ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চান। শুধু শুকুর আলী নয়, তার মতো লাখো নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখা ও তার ভাষণ শোনার জন্য যশোরে আসনে।
শহরের সব সড়কের জনস্রোত শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে গিয়ে মিলিত হয়। স্টেডিয়ামের জনস্রোত উপচে সারা শহরে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা যশোর শহর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের মধ্য দিয়ে শেষ বর্ণিল এই আয়োজন।
এদিকে জনসভায় আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ফের আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। স্থানীয়রা বলছে, যশোরসহ সারা দেশের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই যশোরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আছেন বলেই পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। এই সেতু আজকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করেছে।
মণিরামপুর থেকে জনসভায় আসা রহমত আলী বলেন, আসলে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে উন্নয়ন হয়। সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হয়। তার বিকল্প নেই। আমরা আগামীতেও তাকে চাই। মাগুরা থেকে আসা সুজয় পাল বলেন, আমার এলাকার ৩টা বাসে করে এসেছি বুধবার বিকালে।
রাতেই যশোর শহরের একটি স্কুলে ছিলাম। মাগুরার শালিখা উপজেলার সরশুনা গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলের ব্যতিক্রমী নৌকা চালিয়ে যশোর জেলা শহরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসেন শহর আলী। ৮০ সিসির মোটরসাইকেলের ওপর বাঁশ-কাঠের নৌকার ফ্রেম বসিয়ে যশোওে আসেন। তিনি মূলত বাউল গান করেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এরকম নৌকা বানিয়ে মাগুরা থেকে ছুটে আসেন। শহর আলী বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা আছে। তাই এই নৌকা নিয়ে এসেছি। মানুষকে আনন্দ দেব, নিজেও আনন্দ পাব।
এদিকে, যশোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় পাঁচটি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সহযোগিতায় সিভিল সার্জন দপ্তর এসব মেডিকেল টিমগুলো গঠন করে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, জনসভা স্থলে ও স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। জরুরি স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনে দুটি মেডিকেল টিম রাখা হয়।
এ ছাড়া সব ধরনের চিকিৎসা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ একটি বিশেষজ্ঞ দল ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যালিটি কলেজে দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে, জনসভা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। এছাড়া পুলিশ, র্যাবের টহল দল নিয়োজিত ছিল। সব মিলিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জনসভা সম্পন্ন হয়েছে। জনসভা শেষে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।