শিরোনাম
দেশে ডলার সংকট নিরসনে রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড় করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি ডলার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয় খোলাবাজারে। এ মার্কেটের সিন্ডিকেটের হাতেই ছিলো ডলারের লাগামহীন দর।
তবে এসব সমস্যা আর সংকট কাটাতে এরইমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় শুরু হয়েছে অভিযান। খোলাবাজারে ডলারের লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতেও আভিযানিক দলের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ধীরে ধীরে ডলার মজুতের কারসাজি কিছুটা হ্রাস পায়, ডলারপ্রতি প্রায় ১০ টাকা কমে আসে দাম।
তবে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ আর কেদ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দর বেশ কাজে এসেছে। বাড়তি লাভের আশায় অতিরিক্ত ডলার কেনা থেকে বিরত হন সাধারণ ক্রেতারা। গত কদিনে এক্সচেঞ্জ হাউস এলাকাগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় কমেছে। একই অবস্থা খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও। তারা বলছেন, এখন ডলারের সরবরাহ বেশি রয়েছে, সে তুলনায় ক্রেতা কম। ফলে দামও কমেছে ডলারের। আগামী দু-একদিনের মধ্যে দাম আরও কমার আভাস এক্সচেঞ্জ হাউস ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের।
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউসে ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কেনাবেচা চলছে। খুচরা পর্যায়ে ১১০ থেকে ১১১ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে ডলার। দেশের তফলিসি ব্যাংকে বেচাকেনা চলছে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে আন্তঃব্যাংকে ৯৫ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। আন্তঃব্যাংক থেকে এ দামে অন্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনে থাকে।
বর্তমানে ডলার বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের ২০০টি এডি শাখা রয়েছে। সম্প্রতি ২৩টি ব্যাংক নতুন ৬৬৬ শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা (অনুমোদিত ডিলার বা এডি শাখা) লেনদেনের অনুমতি চেয়েছে। যেখানে ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। তবে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভরশীল গ্রাহকেরা। বিশেষত, প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি পর্যটকসহ সাধারণ গ্রাহকদের এ নির্ভরতা বেশি।
এদিকে এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বেধে দেওয়া ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যেই ডলার বেচাকেনা করছে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। তবে আগের মতো ক্রেতার চাপ নেই।
মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী মোহসিন জানান, ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু ক্রেতা বাড়ছে না। যারা আসছেন তাদের মধ্যে বিক্রেতাই বেশি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে ডলারের দাম আরও কমবে।
বাজারে চাহিদা কম থাকায় ডলারের দাম আরও কমতে পারে বলে জানান একাধিক এক্সচেঞ্জ হাউজ ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন সিকদার বলেন, এখন বাজারে ডলারের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা খুবই কম। ক্রেতা সংকটে বিক্রিও কম। আগামীকাল হয়তো বাজার আরও ডাউন (কমার সম্ভাবনা) হতে পারে। এছাড়া ব্যাংকে অনেক শাখা খোলায় গ্রাহকরা সেখানেও যাচ্ছেন।
এদিন রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকার এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সামনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তুলনায় দালালচক্রের ভিড় বেশি চোখে পড়ে। খোলাবাজারে দালালদের মাধ্যমে কেনাবেচা চলছে। অনেক এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গেও তাদের লবিং রয়েছে। যেখানে এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের চক্র কমিশনে ব্যবসা করছে, এতে গচ্ছা দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের।
এ বিষয়ে কথা হলে হেলাল উদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান বেড়েছে।
পল্টন এলাকায় এ প্রতিবেদক পেশা গোপন করে ক্রেতা সেজে ডলার কিনতে গেলে মনি ও ইমদাদ নামের দুজন কাছে আসেন। তারা ১১২ টাকায় ডলার দিতে পারবেন বলে জানান। দর কষাকষির এক পর্যায়ে ১১১ টাকায় দিতে রাজি হন। এক্সচেঞ্জ হাউজের দিকে যেতে চাইলে চক্রটিও পিছু নেয়। তারা বলেন, আমাদের চেয়ে কম দামে কেউ দিতে পারবে না। অন্য জায়গায় ভেজাল নোটের সম্ভাবনা থাকে, ইত্যাদি...।
এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সামনে এসব দালালচক্রের বিষয়ে হেলাল উদ্দিন সিকদার বলেন, অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করায় আমাদের মধ্যে বৈধ ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। আমরা কাগজপত্র চাইলেতো কেউ এক্সচেঞ্জ হাউজে আসবেই না। এ বিষয়ে নজরদারির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অভিযান ছাড়া এ দালাল সিন্ডিকেট দমানো যাবে না।
এদিকে একাধিক নতুন শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা (অনুমোদিত ডিলার বা এডি শাখা) লেনদেনের অনুমতি চেয়েছে ২৩টি ব্যাংক। ডলার সংকট মোকাবিলা ও মানি এক্সচেঞ্জের দৌরাত্ম্য কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর এ আবেদন করে ব্যাংগুলো। এর আগে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে এলাকভিত্তিক তালিকা চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের ১৭ আগস্ট সময় পর্যন্ত মোট ২৩টি ব্যাংক আবেদন করেছে। এসব ব্যাংকগুলোর শাখার পরিমাণ ৬৬৬টি।
বেশি ডলার সংরক্ষণ করে বেশি বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এছাড়া ডলারের কারসাজি রোধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।একইসাথে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আর ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। যারা এতোদিনে লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করে আসছিল।
সূত্র: জাগো নিউজ