শিরোনাম
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার শিকার কোটির উপরে গ্রাহকের টাকা আদায়ে সরকারের নেওয়া উদ্যোগে গতি নেই। ফলে এই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শরণাপন্ন হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে বহুল আলোচিত ইভ্যালির ৭৪ লাখ গ্রাহকের টাকা ফেরত পেতে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রতারিত গ্রাহকদের গণস্বাক্ষর নিয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবর এ চিঠি দেন ‘ইভ্যালির ক্রেতা-বিক্রেতাবৃন্দ’ সংগঠনের সমন্বয়কারী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক প্রতারককে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নকারী কমিটি আজ মঙ্গলবার প্রথম বৈঠক করবেন। কমিটি গঠনের পর কেটে গেছে ১২ দিন। কমিটির প্রধান বিদেশ থাকায় বৈঠকের আয়োজন করতে বিলম্ব হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী এ কমিটিকে দুমাসের মধ্যে আইন প্রণয়নের খসড়া তৈরি করতে হবে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কমিটিকে আইন প্রণয়নের জন্য দুমাস সময় দেওয়া হয়েছে। কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। আইন করা গেলে ই-কমার্স খাতে ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নতুন করে এ খাতে প্রতারণার ঘটনা কম হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ১২টি প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অধীনে এক কোটির বেশি গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকা খুইয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা সেটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কেউ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৭ দফা সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ইভ্যালির ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমন্বয়কারী। সুপারিশগুলো হচ্ছে-টাকা ফেরত পেতে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে মুক্তি প্রদান, মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিয়ে রাসেলকে ব্যবসা করার সুযোগ, আগের অর্ডারকৃত পণ্য ডেলিভারিতে সময় প্রদান করা। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই-ক্যাব পেমেন্ট গেটওয়ে মার্চেন্ট এবং ভোক্তা প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, ব্যাংক গ্যারান্টিসহ ই-কমার্সের লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক, সম্ভাবনাময় ই-কমার্সকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা দেওয়া।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ইভ্যালির ৭৪ লাখ গ্রাহক, ৩৫ হাজার বিক্রেতা ও ৫ হাজার স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মী রয়েছে। বর্তমান ইভ্যালির সংকট উত্তরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ই-ক্যাব, মার্চেন্ট, ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সেখানে আরও বলা হয়, এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে ৭৪ লাখ গ্রাহক পথে বসার উপক্রম হবে।
জানতে চাইলে সমন্বয়কারী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। ই-ক্যাবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আলোচনা ও দিকনির্দেশনার মাধ্যমে ইভ্যালিকে ব্যবসা করার সুযোগ দিলে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা হবে।
গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। তবে ভবিষ্যতে ই-কমার্স খাতে প্রতারণা ঠেকাতে নতুন আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেটিও অনেক ধীরগতিতে চলছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ই-কমার্স খাতে নতুন আইন প্রণয়নের জন্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামানকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান অবস্থা নিসরনে করণীয় ঠিক করতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে।
বিষয়টি জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে কমিটির প্রধানকে পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশ সফর শেষে সোমবার দেশে ফেরার কথা। এজন্য তিনি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। সূত্র: যুগান্তর