শিরোনাম
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯ দিন কারাভোগের পর জামিন পেলেন মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল।
মুন্সীগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়া রবিবার তার জামিন মঞ্জুর করেন।
শিক্ষকের নিযুক্ত আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২২ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে পুলিশ আটক করে। ওইদিন রাতে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে হৃদয় চন্দ্র ম-লের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।
পরদিন ২৩ মার্চ পুলিশ ওই শিক্ষককে আদালতে পাঠায়। ওইদিনই আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। গত ৪ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই শিক্ষকের জামিন আবেদন করা হয়। তবে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করে।
জানা গেছে, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল। সে সময় প্রসঙ্গক্রমে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি। তখন বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী জোনায়েদ আল একান্ত সেই আলোচনা মোবাইল ফোনে ধারণ করে। পরদিন শিক্ষার্থীরা ‘আপত্তিজনক কথাবার্তার’ অভিযোগ এনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। প্রধান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে শোকজ করে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন।
তবে ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজ্জামান আনিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম। তাদের উপস্থিতিতেই শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে সদর থানা হেফাজতে নিয়ে আসে পুলিশ।
এ ঘটনার পর শনিবার স্কুলশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এছাড়া হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে গতকাল বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের নেতা নিরোদ বরণ মজুমদার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নেতা মুজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
গত বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন।
সূত্র: দেশ রূপান্তর