শিরোনাম
মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ‘গুজবের ভিত্তিতে’ মামলা এবং জামিন না দেওয়া ভবিষ্যতে সমাজে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেছেন, দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক পাঠদানরত অবস্থায় কী আলোচনা হয়েছে, সেটাকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের জেএমসেন হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত বসন্ত উৎসবে শুক্রবার রাতে এসব কথা বলেন তিনি।
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।
সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী ও ব্যক্তি এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্রের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ মার্চ তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরে জামিন আবেদন করা হলেও মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার জামিন হয়নি।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্রের নাম উল্লেখ না করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বলেছে, কেউ শুনেছে এমন গুজবের ভিত্তিতে একটি মামলাও হয়েছে। সেই মামলা আবার রেকর্ডও হয়েছে। শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জামিন দেয়া হলো না। এ ঘটনা একজন নাগরিকের সুবিচার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে অন্তরায়।’
তিনি বলেন, যারা গুজব রটায়, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন বলে মনে করেন নওফেল। অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের গুজব তুলে কেউ যদি কোনো অভিযোগ করে, তাহলে পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে বলব এই প্র্যাকটিস সমাজে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন। ধর্মে ধর্মে বিভাজনের নোংরা রাজনীতি, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
উপমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ এর শক্তির ষড়যন্ত্র চলছে, তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানের মতো কট্টর সমাজব্যবস্থা তৈরি করা। এদের মোকাবিলা করতে হবে। চাপের মুখে মাথা নত করা যাবে না। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে ষড়যন্ত্র পরাস্ত করা হবে, এটা আমাদের ওয়াদা।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৩ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এর আগে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তাদের সাম্প্রদায়িক, শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানসিকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে মানবিক আচরণ, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমমত্ববোধ, ভালোবাসা এখন শুধুমাত্র পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যতটুকু সম্ভব সকল সম্প্রদায়ের জন্য সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সমঅধিকারের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দেশে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কথা বললেও সত্যিকারে সে আদর্শ ধারণ করে কি না, আবার অনেকে প্রগতিশীলতার কথা মুখে বললেও বাস্তব জীবনে সেটার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে কি না সেটা চিন্তা করার সময় এসে গেছে। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান, দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, ধর্মচর্চার অধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে শ্রেষ্ঠত্বের যে শিক্ষা, নিজেকে সর্বোচ্চ- সর্বোত্তম ভাবা, এটা কু-শিক্ষা। এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসেছে এবং এর প্রতিফলন আজ সমাজে দেখতে পাচ্ছি। মানুষে মানুষে যে বিভাজন, এটা সমাজে শঙ্কা ও ভীতি তৈরি করছে।’
শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ বিভাজনের পরিবর্তন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামজিক আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছপা হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হবে, এরপর আফগানিস্তানে রূপান্তর হবে। সকল নাগরিকের সমান অধিকার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না।’
সূত্র: দেশ রূপান্তর