শিরোনাম
দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত কলেজছাত্রী প্রীতির শান্তিবাগের বাসায় চলছে শোকের মাতম। মেয়ে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন ও মা হোসনে আরা।
‘বিচার চাই না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। কার শাস্তি চাইব? বিচার নাই, বিচার কার কাছে চাইব?’ মেয়ে হত্যার পর এভাবেই ক্ষোভ, প্রতিবাদ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন সামিয়া আফরিন প্রীতির বাবা।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর আমতলা রেলগেট এলাকায় বান্ধবীর সঙ্গে রিকশায় থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রীতি। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
যানজটে আটকে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিটুকে এক দুর্বৃত্ত গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় পাশের রিকশায় থাকা সামিয়ার শরীরেও গুলি লাগে।
রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রীতি। অকৃতকার্য হওয়ায় আবার পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।
শনিবার দুপুরের পর নিহত প্রীতির বাসায় গিয়ে জানা যায়, বাবা জামাল মিরপুরের একটি প্লাস্টিক কারখানায় ১৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। শান্তিবাগের ২১৮ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় থাকেন তারা। বাসায় ঢুকেই পরিবারটির আর্থিক অনটনের বিষয়টি বোঝা যায়।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রীতির স্বজনরা।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, একজনকে মারতে গিয়ে আমার মেয়ের শরীরে গুলি লেগেছে। সন্তানের এমন মৃত্যু কোনো বাবা-মা চান না। আমি তো আমার মেয়েকে হারিয়েছি। সম্পদ গেলে সম্পদ ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু কোনো প্রাণ গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। আমি কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই না।
জামাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় প্রীতির। তখন তার মা বলেছিলেন, ‘বাসায় তোর মামা এসেছে, তোর আজ বাসায় আসার দরকার নেই, বান্ধবীর বাসায় থাক।’ পরে প্রীতি বান্ধবীর বাসায় ফিরে যাচ্ছিল। তখনই ওই ঘটনা ঘটে। ওর বান্ধবীও ওর সঙ্গে ছিল।
আহাজারি করতে করতে জামাল বলেন, আমার স্ত্রী হোসনে আরা তিন বছর আগে তার বাবাকে হারিয়েছে। গত রাতে মেয়েকেও হারাল। তাকে কোনো কিছু বলে বোঝানো যাচ্ছে না। সন্তানহারা স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।
প্রীতির বাবা বলেন, মামলা চালানোর মতো অবস্থা আমাদের নেই। আমরা নিরীহ মানুষ। তাই কোনো বিচার চাই না। বিচার চাইলে আল্লাহর কাছে চাই। তিনিই বিচার করবেন। কোনো বিবাদে জড়াতে চাই না। কেউ যদি সহযোগিতা করে সেটা ভিন্ন বিষয়।
তিনি বলেন, মিরপুর-২ এ একটি কোম্পানির ফ্যাক্টরির প্রডাকশনে চাকরি করি। বেতন বেশি পাই না। অনেক কষ্টে মেয়ে প্রীতি ও ছেলে সোহায়েব জামাল সামি ও স্ত্রীকে নিয়ে পশ্চিম শান্তিবাগের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকি। পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে প্রীতি নিজে চাকরির চেষ্টা করছিল। ১৫ হাজার টাকায় একটা অফিসে চাকরি নিয়েছিল। সামনের মাসে জয়েন করার কথা ছিল মেয়েটার। কিন্তু সেটা আর হলো না।
প্রীতির বান্ধবী সুমাইয়া বলেন, ‘চারদিন আগে সে খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় আমাদের বাসায় এসেছিল। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিল। বাসার কাছাকাছি গেলে প্রীতিকে তার মা হঠাৎ ফোন দিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রাম থেকে প্রীতির মামা-মামি এসেছেন। বাসায় এলে থাকতে সমস্যা হবে। সে যেন আজকেও আমার বাসায় থাকে।
বিষয়টি প্রীতি আমাকে ফোনে জানালে আমি তাকে আনতে আমতলা এলাকায় যাই। আমরা খিলগাঁও তিলপাপাড়া যাওয়ার জন্য রিকশা নিই। রিকশায় ওঠার পরপরই হঠাৎ শব্দ শুনি। দুজনই রিকশা থেকে পড়ে যাই। পরে প্রীতির গায়ে রক্ত দেখে আশপাশের লোকজন বলেন, গুলি লাগছে। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র: যুগান্তর