শিরোনাম
সোমবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে বিয়ে করা সেই ফাহমিদা কামাল মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ফাহমিদা কামাল (২০) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের প্রথম সন্তান মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী।
হাসানের ফুফাতো ভাই মো. জুবায়ের বলেন, সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ফাহমিদার মৃত্যু হয়। ফাহমিদার অকাল মৃত্যুতে নগরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিনি জানান, ফাহমিদাকে আর বাঁচানো গেল না। তার কপালে জুটল না সুখের সংসার। বাদ আসর ফাহমিদার নিজবাড়ি দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ফাহমিদার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার আশা নেই।
পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সি ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান।
সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
এদিকে ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। এ ঘটনায় হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হাসান। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বোঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।
বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে ওঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি।
অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন সম্পণ্ন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালাবদল করে খাওয়ানো হয় খেজুর।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের এমন বিয়ে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসার এমন নজিরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। এমন ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন— চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে এটিই প্রথম বিয়ের কোনো ঘটনা।
সূত্র: যুগান্তর