শিরোনাম
বরিশালের রাকিব হাসান শুভ'র সঙ্গে পরিচয় হয় জার্মানির এক তরুণীর সঙ্গে। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ তারা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে মেয়ে পক্ষের অভিভাবক ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রবাসের সেই বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি ছেলের স্বজনরা।
রাকিব হাসানের ইচ্ছে ছিল বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই নববধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসবেন। বাবা-মায়ের দোয়া নেবেন। বাড়িতে অনুষ্ঠান করে আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ করে খাওয়াবেন। কিন্তু বাধ সাধে করোনা।
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে দেশে আসার সিধান্ত নেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসে। ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। নাতি দেখতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন দেশে থাকা দাদা-দাদি। অবশেষে জার্মানি বধূ ও ছয়মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে শনিবার (০৫ মার্চ) সকালে দেশে আসেন রাকিব হাসান। এরপর ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছান চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা বাজার সংলগ্ন মাঠে। জার্মানি পুত্রবধূ ও ছয়মাসের নাতিকে বরণ করে নিতে সেখানে হাজির ছিলেন রাকিব হাসানের বাবা-মা ও স্বজনরা। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা-মা। তারা ছেলে ও ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরেন। নাতি কোলে নিয়ে চুমু খান।
অন্যদিকে হেলিকপ্টারে করে জার্মানি বধূকে আনা হবে, এমন খবর আগেই প্রচার হয় এলাকায়। হেলিকপ্টার ও জার্মানি বউ দেখতে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয় কাগাশুরা বাজার এলাকায়।
হেলিকপ্টার থেকে তারা নেমে আসার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে নেওয়া হয় বাড়িতে। ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি আসার খুশিতে দুপুরে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয় বাড়িতে। আমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ পাঁচ শতাধিক লোককে।
রাকিব হাসান বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের উলালবাটনা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে। ২০১১ সালে ইতালি যান রাকিব। পরবর্তীতে সেখান থেকে জার্মানিতে যান। সেখানে আলিশাহ নামে হাসপাতালের এক সেবিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। এরপর তারা বিয়ে করেন।
রাকিব হাসানের বাবা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ইতালি ছিলেন। ইতালি থাকাকালে ২০১১ সালে ছেলে রাকিবকে সেখানে নিয়ে যান। পরবর্তীতে রাকিব সেখান থেকে জার্মানিতে যায়। বর্তমানে রাকিব সেখানকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। জার্মানির এক তরুণীকে তার পছন্দ হয়। বিয়ের জন্য রাকিব সম্মতি চেয়েছিল। ভিডিও কলে দেখে আমাদেরও মেয়ে পছন্দ হয়। সম্মতি দেওয়ার পর রাকিব ও আলিশাহ বিয়ে করে। তবে জার্মানি গিয়ে সে বিয়েতে আমাদের উপস্থিত থাকা সম্ভব ছিল না। বিয়ের পর রাকিব ও আলিশাহ’র বরিশালে আসার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে তারা আসতে পারেনি। তাছাড়া দু’জনই চাকরি করে। কর্মস্থল থেকে ছুটি পাওয়ার বিষয় ছিল। তাদের আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। এরই মধ্যে আমাদের নাতি জন্ম নেয়। নাতিকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো । অবশেষে তারা এসেছে। ছেলের বউয়ের সঙ্গে তার বান্ধবী জেনিও এসেছেন। নাতি-ছেলে ও ছেলে বউকে কাছে পাওয়ার আনন্দ বলে বুঝানো যাবে না।
মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ছেলের বিয়ে উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারিনি। আজ তাই বাড়িতে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার অনেকে এসেছেন। তারা ছেলের বউ ও নাতিকে দেখেছেন। দোয়া করেছেন। এছাড়া জার্মানি ছেলে বউকে দেখতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ আসছেন। তাদের মিষ্টান্ন খাওয়ানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জার্মান প্রবাসী রাকিব হাসান জানান, করোনার কারণে জার্মানিতে নানা বিধি নিষেধের মধ্যে থাকতে হয়েছে। আমি ও আলিশাহ অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাছাড়া আমাদের ৬ মাসের ছেলে ইলিয়াস হাসানকে দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন বাবা-মা। তারা ফোনে কথা বলার সময় আক্ষেপ করতেন। নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করার অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে তাদের আশা পূরণ হয়েছে।
রাকিব হাসান বলেন, আলিশাহ প্রথম বাংলাদেশে এসেছে। এখানে তার অনেক ভালো লাগছে বলে অনুভূতি প্রকাশ করেছে। সে আমাকে বলেছে, এখানকার পরিবেশ, অভ্যর্থনা তার খুব চমৎকার লেগেছে। তার অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ