শিরোনাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি ঈশ্বরদীর রূপপুরে কর্মরত ওই দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে। রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয়রা রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে রাশিয়া আর্থিকভাবে বেশ চাপে পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
তবে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং কাজের শিডিউলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে নিশ্চিত করেছে রূপপুর প্রকল্প নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা (রসাটম)। গণমাধ্যমে পাঠনো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রসাটম বিষয়টিতে আশ্বস্ত করেছে।
রসাটম জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অচলাবস্থার আশঙ্কা নেই। এই ইস্যুতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৩ সালেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর কথা রয়েছে।
রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা- কর্মচারীরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ চললেও ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভিন্ন অবস্থা বিরাজমান। এখানে রুশ ও ইউক্রেনীয়রা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। একসঙ্গে চলাফেরা, একই ভবনে বসবাস ও রেস্তোরাঁ-হোটেলে খাওয়া দাওয়াও করছেন তারা। তবে পরিবার পরিজনের জন্য ইউক্রেনের নাগরিকদের উদ্বিগ্ন দেখা যায়। তারপরও তারা সহকর্মীদের সঙ্গে পেশাদারিত্ব নিয়ে সৌহার্দ বজায় রেখেছেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, রূপপুরে ২৭-২৮ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে ১৬টি দেশের সাড়ে ছয় হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এর বেশিরভাগ রাশিয়ান। এখানে দুই শতাধিক ইউক্রেনের নাগরিক রয়েছেন। সকলে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে মিলেমিশে কাজ করছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
তিনি আরো জানান, রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ইউক্রেনের নাগরিকরা এখানে কাজ করছেন।
গ্রিন সিটির ৩নং গেটের সামনের ‘ফুড ওয়েভ’ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান শিপন জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা একসঙ্গে চলাফেরা করছেন। কেনাকাটাসহ রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খেতে আসছেন।
রূপপুর প্রকল্পের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন ও অর্থ) অলোক চক্রবর্তী জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব রূপপুর প্রকল্পের কাজে পড়েনি। এখানে দুই দেশের নাগরিকরা পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সঙ্গে কাজ করছেন।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণ হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
২০২১ সালের অক্টোবরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল অংশ রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও সমান গতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালিত হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২৪ সালে।
উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরমাণু শক্তি কমিশন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রসাটম) নেতৃত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুরে। খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ইউক্রেনে যুদ্ধ অভিযান দীর্ঘমেয়াদী হলে তার প্রভাব বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ওপরও পড়তে পারে এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই শঙ্কা দূরীভূত করার জন্য রসাটমের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার স্থানীয় কনসালটেন্ট জানিয়েছেন।
সূত্র: জাগো নিউজ