শিরোনাম
আট লেনের সড়ক। দুপাশের ফুটপাতও বেশ চওড়া। সারিবদ্ধভাবে লাগানো নানা প্রজাতির গাছ। রয়েছে সবুজ ঘাসও। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য কিছুদূর পরপর বসানো কাঠের লম্বা বেঞ্চ। সিগন্যাল পড়লে থামছে গাড়ি, পার হচ্ছেন পথচারীরা। তাদের পারাপার শেষে ফের ছুটছে গাড়ি। কোথাও কোনো যানজট নেই। অযথা হর্নও নেই। সূত্র: জাগো নিউজ
সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর সড়কটি তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়। নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক’। সড়কটির গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য। এর নিচে শ্বেতপাথরে তার্কিশ ভাষায় খোদাই করে লেখা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনী। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে যিনিই যাতায়াত করছেন তিনি যেমন সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন তেমনি চোখ আটকে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে।
এ দৃশ্য দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ান। বিশেষ করে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। নিরিবিলি খানিকটা সময় কাটান।
তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপােরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় এই আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করেছে আঙ্কারা সিটি করপোরেশন। এটি তৈরি করেছেন তুরস্কের বিখ্যাত ভাস্কর মের্ট কিলিন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। এখন আঙ্কারা শহরে এটি খুবই পরিচিত। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে মোড়টি পরিচিতি পেয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নামে।
এর আগে ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই সড়কের নামকরণ করে আঙ্কারা সিটি করপোরেশন। একই সময়ে ঢাকার বনানীতে তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের নামে একটি সড়কের নামকরণ করে তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। এছাড়া গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আঙ্কারার পাহাড়ি আবাসিক এলাকা কেসিওরানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল পার্কও উদ্বোধন করা হয়। এখন ঢাকার বনানী পার্কের নাম পরিবর্তন করে কামাল আতাতুর্কের নামে নামকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএনসিসি। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লাখো পর্যটক তুরস্কে বেড়াতে যান। তারা যেন ভাস্কর্য, সড়ক এবং পার্ক দেখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারেন, সে চিন্তা থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে আঙ্কারা সিটি করপোরেশনকে প্রস্তাব দেই। বিনিময়ে তারাও ঢাকার কামাল আতাতুর্ক সড়কে তাদের জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনে আগ্রহ দেখায়। এছাড়া কামাল আতাতুর্কের নামে একটি পার্ক করার আহ্বান জানায়। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে ডিএনসিসির একটা চুক্তি হয়েছে। এভাবে বিশ্বের সব দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ছড়িয়ে দিতে চাই। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতে চাই।
তিনি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এখন আমরা তুরস্কের সঙ্গে অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবো। এভাবে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
সড়কটি যেখানে সেটি আঙ্কারার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা। চারদিকে উঁচু পাহাড় ঘেরা শহরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বিমোহিত করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সড়কে ওই মােড়ে একটি বড় কংক্রিটের কাঠামোর ওপর পিতলের তৈরি বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি বসানাে হয়েছে। এর নিচের অংশে শ্বেতপাথরে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনী লেখা।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা (১৭ মার্চ ১৯২০-১৫ আগস্ট ১৯৭৫)। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তার অবিসংবাদিত ও বিপ্লবী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এখন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এভাবে নানা উপমা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবন ও অর্জন তুলে ধরা হয়েছে শ্বেতপাথরে। যা অনেক দূর থেকেও চোখে পড়ে। এছাড়া ভাস্কর্যের নিচের লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। চারপাশে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার জায়গা।
তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কে গেলে মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করি। বিদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক ও ভাস্কর্য আমাদের সম্মানিত করেছে। পর্যটন মৌসুমে (মার্চ থেকে অক্টোবর) প্রচুর বাঙালি এই সড়কে বেড়াতে আসেন। তুরস্কের স্থানীয় মানুষও একনামে বঙ্গবন্ধু সড়ক চেনে।
ওই মোড়ের পাশে সবুজ চত্বরে বসে গল্প করছিলেন আঙ্কারার কয়েকজন তরুণ। তাদের মধ্যে একজন আহমেদ ইমরান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়ককে চিনি। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এমন মহান নেতার নামে আঙ্কারায় সড়কের নামকরণ ও ভাস্কর্য স্থাপন করায় আমরাও খুশি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো তুরস্কের জাতীয় নেতা ছিলেন কামাল আতাতুর্ক। আমরা জেনেছি বাংলাদেশে আমাদের এই মহান নেতার নামে সড়ক এবং পার্ক করা হয়েছে। এটা তুরস্কের জন্য গর্বের।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান বলেন, তুরস্কের জাতির জনক কামাল আতাতুর্কের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুই নেতার এই সম্পর্ক স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ-তুরস্ক অনড়। এই দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা শ্রদ্ধারই প্রতিফলন নয়, অধিকন্তু তাদের আদর্শ ও দর্শনের প্রতি আস্থারও বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। এখন তুরস্কের বুকে বঙ্গবন্ধুকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি কিছু চলচ্চিত্র আঙ্কারাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছি।