শিরোনাম
লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে উত্তাল রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে দু-থেকে চার ফুট বাড়ছে জোয়ারের পানি। বাড়ন্ত পানির ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমে ভাঙছে কক্সবাজার সৈকত বালিয়াড়ি। ঢেউয়ের ঝাঁপটায় ক্ষয়ে যাচ্ছে সৈকতের বালু। তলিয়ে যাচ্ছে ঝাউগাছের সারি। ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সৈকতের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেট। পূর্ণিমার জোয়ারের পানির উচ্চতা আরও বাড়লে ভাঙনও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বালু সরে গেছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। এতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ভাঙনকবলে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি, ঝাউগাছ। ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত চলে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ঝুঁকির মুখে পড়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স। কিছু কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টিউব দিয়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করলেও প্রকৃতি এসব বাধা মানছে না।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, জোয়ারের বাড়ন্ত পানির ঢেউয়ের তোড়ে পড়ে আমাদের ডিউটি ঘরটি তলিয়ে যাচ্ছিল। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরটি কোনো মতে খুলে সাগরে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করেছি।
লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মী ওসমান বলেন, এত উচ্চতায় জোয়ার বিগত বছরগুলোতে দেখিনি। সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বালিয়াড়ি ভাঙছে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে সৈকত। ঢেউয়ের তোড়ে ফুট ওয়ের ইট উঠে গিয়ে এলোমেলো হওয়ায় সৈকতে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছেন অনেক পর্যটক।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল। উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিপাত ও দমকা ঝড়ো হাওয়া চলছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দু-চার ফুট বাড়ছে। শুক্রবার পূর্ণিমার জোয়ারে পানি আরও বাড়তে পারে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার ট্রলারকে পরবর্তী সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পাউবো সূত্র মতে, ২০২১ সালে সৈকতে ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নির্দেশে সৈকতের ভাঙন রোধে সীমিত আকারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বা ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভাঙনরোধের আওতায় ১৫-১৬ মিটার এলাকায় জিও টিউব দিয়ে দুই কোটি টাকার অস্থায়ী মেরামত কাজ করে।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, সৈকতের এ ভাঙন আশঙ্কাজনক। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া সেনাবাহিনী হিমছড়ি এলাকায় ট্রিট্টা ব্যবহার করে ভাঙন রোধে সফল হয়েছেন। এখানেও ট্রিট্টা ব্যবহার করা যায় কি না সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে।
সুগন্ধা পয়েন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শুধু চিত্ত বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র নয়। বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর স্থান। সরকার কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অথচ সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা সমুদ্র সৈকত হুমকির মুখে।
আমরা কক্সবাজারবাসীর সমন্বয়ক শেখ মহসীন বলেন, দেশের জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে রক্ষার দাবি সবার। কারণ, সমুদ্র সৈকত ঘিরে নানা কার্যক্রমে হাজারো কর্মসংস্থান হয়েছে। সমুদ্র সৈকত ধ্বংস হলে দেশের পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পাশাপাশি এসব কর্মজীবীদের জীবনেও বিপর্যয় নেমে আসবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সৈকতে ডায়বেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৗসুমে ভাঙনের কবলে পড়ছে। তা রোধে প্রাথমিকভাবে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে। তবে ভাঙনরোধের স্থায়ী সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। শুক্রবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকতের লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশে আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করছে। শুক্রবার পূর্ণিমার জোয়ারে সাগর আরও উত্তাল হতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন ও পাউবো একসঙ্গে কাজ করছে।
সূত্র: জাগো নিউজ