শিরোনাম
আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ এখন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। আর নতুন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ‘অশনি’র গতিও নিতে পারে ভয়ঙ্কর রূপ।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কোনটি বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে বা কোনটির প্রভাব কেমন হবে; সেটাই এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, যমজ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনির গতি আরও বেশি হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সেটি নির্ভর করছে অন্য নিম্নচাপটির শক্তিশালী হওয়ার উপর।
জানা যায়, নিরক্ষরেখার উত্তরে ঘূর্ণিঝড় অশনি। আর নিরক্ষরেখার দক্ষিণে দ্বিতীয়টি এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, এটি দ্রুত আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, একদিকে যেমন অশনি জলীয় বাষ্প টানবে আন্দামান সাগর থেকে, অন্যদিকে নতুন নিম্নচাপটি জলীয় বাষ্প টানবে ভারত মহাসাগর থেকে। দুটির মধ্যে বিস্তর টানাটানি হবে। ফলে একদিকে যেমন বায়ুপ্রবাহ পাক খাবে ঘড়ির কাঁটার দিকে, তেমনি অন্যদিকে তা ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতেও। যে বেশি বাতাস টানবে তারই শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
যমজ ঘূর্ণিঝড় নতুন কোনও বিষয় নয়। তিন বছর আগেও ২০১৯ সালের ৩ মে যখন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ফণী সৃষ্টি হয়, একই সময়ে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় লর্না। তবে লর্না শক্তিশালী না হওয়ার কারণে চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল ফণী।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা এই বিষয়ে বেশি কিছু জানাতে পারেননি। আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মন্ডল জানান, আপাতত তারা প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারতে মহাসাগরের নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এবং উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে তখন তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। আর এত দূরের ঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কাও প্রায় নেই।
ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘যমজ ঘূর্ণিঝড় অবশ্যই আশঙ্কার বিষয়। তবে ভারতে মহাসাগর অনেক দূরে। সেখানে ঝড় তৈরি হয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে উপকূলের দিকে আসতে অনেক সময় নেবে।’ আর এ সময় ভারী বৃষ্টি হলেও ঝড়ের শক্তি অনেকাংশে কমে যায় বলেও জানান তিনি।
তবে পূর্ণিমার সময় ঝড় হলে স্বাভাবিকভাবেই পানির উচ্চতা বেড়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৬ মে পুর্ণিমা। সে সময় ঝড় উপকূলের দিকে থাকলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অন্তত তিন থেকে চার ফুট বেশি জ্বলোচ্ছ্বাসের ভয় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এটি ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। যমজ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু না। তবে কোনটি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, বা কোনটির প্রভাব কেমন হবে সেটাই এখন আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
যেভাবে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়
সাধারণত নিম্নচাপ থেকে জন্ম হয় ঘূর্ণিঝড়ের। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়। সেই খালি জায়গা ভরাট করতে তখন মেরু অঞ্চল থেকে ঠান্ডা বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে ছুটে আসে। কিন্তু এই বাতাস সোজাসুজি প্রবাহিত হয় না। পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরে বলে একরকম শক্তি তৈরি হয়, যার ফলে এই বাতাস উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণে ও দক্ষিণ গোলার্ধের উত্তরে বেঁকে যায়। প্রবল বেগে বইতে থাকা এই বাতাস ঘূর্ণি তৈরি করে, যাকে আমরা ঘূর্ণিঝড় বলি।