শিরোনাম
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার কারণে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক বার্তা দিয়ে বলেছেন, এখনই কিছু করুন, না হলে সংকটের ঝুঁকিতে থাকুন! তাপমাত্রার বিপজ্জনক বৃদ্ধি রোধে পৃথিবীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতাবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের গ্রহটি আগামী ১০ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে, যা হবে প্রাক-শিল্পযুগের মাত্রার থেকেও বেশি।
এতে জলবায়ু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নেবে; বিশেষ করে চরম দুর্ভিক্ষ, দাবানল, বন্যা, সেই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার এই সীমা অতিক্রম রোধে বিশ্বের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তন আনা। এক্ষেত্রে আমরা কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারি?
বস্তুত প্রত্যেকের একক প্রচেষ্টা বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকে মনে করেন, শুধু গাছ লাগালেই বুঝি আমাদের সব বিপর্যয় কেটে যাবে! কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, গাছ লাগানো পরিবেশের জন্য যতটা সহায়ক, ব্যক্তিসচেতনতা এর চেয়ে শতগুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তবে এক্ষেত্রে গাছ লাগানোকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা যাবে না। যেখানে একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার, সেখানে আমাদের দেশে রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। বনভূমির এই অপর্যাপ্ততা গাছ লাগানোর মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে হবে।
তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার ঊর্ধ্বগতির মাত্রা কমাতে এবং আগামী দিনের পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে শুধু গাছ লাগানোয় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, আমাদের আরও কিছু নৈতিক করণীয় রয়েছে। ব্যক্তিজীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন: ১. বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী গণপরিবহণ থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার জন্য আমরা গণপরিবহণ যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে পারি। এভাবে গণপরিবহণের সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
২. প্রতিটি জিনিস পুনঃব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। বৃষ্টির পানিকে অপচয় না করে আমরা এটাকে ব্যাবহারিক কাজে লাগাতে পারি, নিত্যনৈমত্তিক ব্যবহৃত পানি ফেলে না দিয়ে তা আমরা গাছের নিচে দিতে পারি। এতে গাছের সতেজতা আরও বাড়বে।
৩. শক্তির অপচয় রোধ করতে হবে। যেখানে যতটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করতে হবে। বিকল্প হিসাবে আমরা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার করতে পারি। ৪. খাবারে আমিষের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। কারণ শাকসবজি বা শস্যের উৎপাদনের চেয়ে মাংসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিসচেতনতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু; কিন্তু গাছের সঙ্গে বন্ধুত্বের সফলতা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন আমরা গাছের ওপর চাপ কমিয়ে ব্যক্তিসচেতনতার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে পারব।
রিফাত হোসেন : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: যুগান্তর