আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সুনসান নীরবতা গ্রামে, ৩ নারীসহ গ্রেপ্তার ৪

ফানাম নিউজ
  ০৩ মে ২০২২, ১০:৩৭

ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের কাছ থেকে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে, রবিবার দিবাগত রাতে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানকালে সংঘর্ষে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা ১৫ বস্তা ভাঙা ইট এবং ঢাল সড়কিসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া নারীরা হলেন- রহিমা আক্তার, চাঁদনি বেগম ও শারমিন আক্তার। গ্রেপ্তার হওয়ার অপরজন হলেন সাইফুল ইসলাম। এরা সকলেই যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বলেন, রবিবার দুপুরে খারদিয়া থেকে পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি তারা মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন এসআই মো. নাজমুল ও এএসআই মো. লিয়াকত হোসেন। এ সময় আসামি ছিনিয়ে নিতে ১৮-২০ জন নারী এগিয়ে এসে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। নারীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঝাপটে ধরে আলাদা করে ফেলেন। এই সুযোগে পালিয়ে যান তারা মিয়া। তারা মিয়া মোট ৪টি মামলার আসামি। এর মধ্যে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
 
তিনি বলেন, রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৩ নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে গত ২১ এপ্রিল দায়ের করা পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি দেখিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার সকাল ১০ টার দিকে সরেজমিনে খারদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ছয়আনি পাড়ায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। কোনো বাড়িতে নারী-পুরুষ বা শিশু কেউ নেই। ছয়আনি পাড়ার সব কটি বাড়িতেই তালা ঝুলতে দেখা গেছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে এ পাড়ার লোকজন ঘর বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে আছে বলে আশপাশের মহল্লার নারীরা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নারী জানান, যদুনন্দী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সাথে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। রফিক চেয়ারম্যানকে মদদ দেন খারদিয়া গ্রামে বাসিন্দা মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক ইলিয়াস কাজী, যদুনন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমাইন খা, মৃত সাত্তার মিয়ার দুই ছেলে টুলু মিয়া ও জাহিদ মিয়া। এরা বিএনপি সমর্থক। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর মিয়াকে মদদ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর।

তারা জানান, এই দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার রেষারেষি ও জেদাজেদির কারণে উত্তপ্ত হয়ে আছে যদুনন্দী ইউনিয়ন। তবে সবচেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে পড়েছে খারদিয়া এলাকা। তাদের ইন্ধনেই মূলত খারদিয়ায় মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আর এসব সংঘর্ষের ঘটনার বলি হয় গ্রামের সাধারণ মানুষ।

ওই এলাকার বাসিন্দারা আরও জানান, শুধু এই গ্রামের পুরুষরা নয়, নারীরাও এখন স্থির থাকতে পারে না। তারাও বিভিন্নভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। এরই প্রেক্ষাপটে কয়েকজন নারী পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আসামি তারা মিয়াকে ছিনিয়েও নিল। এটা আমাদের নারীদের জন্য কলঙ্কজনক ঘটনা। এখন কয়েকজন নারীর কারণে পুরো এলাকার নারীদের বদনাম হয়েছে। আবার অপরাধী নারীদের পাশাপাশি নিরীহ নারীরাও আজ বাড়িতে থাকতে পারছে না। নারীরা যে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেই তারা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সমর্থক।

সূত্র: দেশ রূপান্তর