যমুনা নদীতে আবারও ভাঙন শুরু

ফানাম নিউজ
  ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৬:২২

যমুনা নদীতে গত কয়েক দিনে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর নদীর পয়েন্টে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি ও জালালপুর এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের আশঙ্কায় অনেকে আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য সাড়ে ৬শ' কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেই অনুযারী কাজও শুরু হয়েছে।

তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১০ ও ১৪ নং প্যাকেজ এলাকার কাজ এখনও শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে যমুনা নদীতে দ্রুত গতিতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য বর্ষা শুরু আগেই ১০ ও ১৪ নং প্যাকেজ এলাকার কাজ শুরু দাবি জানান তারা।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলা যমুনা নদীবেষ্টিত। জেলার ৫টি উপজেলা যমুনার তীরে অবস্থিত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টসহ ৪টি ক্রস বাঁধ নির্মাণ করলেও ভাঙন থেকে রক্ষা পচ্ছে না সিরাজগঞ্জের মানুষ।

২০২১ সালের ২৯ জুন সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের ১৫০ মিটার ও কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের ঢেকুরিয়ায় নির্মাণাধীন ইকোপার্কের গাইড বাঁধে ধস নেমে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত এলাকা চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী ইউনিয়ন।

গত বছরের বন্যায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী, জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের পাচিল, হাট পাচিল, পাকরতলা, ব্রাহ্মণগ্রাম, জয়পুরা, আরকান্দি, কুঠিপাড়া, ভেকা গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত মানুষ ‘বাঁধ নির্মাণের দাবিতে একাধিকার মানববন্ধন, সভা, সেমিনার, অনশন পালন করেছে।

যমুনার ভাঙন ঠেকাতে প্রথম ব্যবস্থা নেয়া হয় ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে। তারপর থেকে প্রতি বছর নানাভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ভাঙন ঠেকাতে। কিন্তু যমুনার পশ্চিম দিকের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তাতে বারবার ধস নামে। প্রতি বছর ভাঙনের কারণে বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের মানচিত্র।

স্থানীয় জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, এনায়েতপুরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ১০ ও ১৪ নম্বর পয়েন্টে কাজ শুরু করা হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙনও শুরু হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই এই দুটি পয়েন্টে দ্রুত কাজ শুরু করতে না পারলে ভাঙনে শেষ হয়ে যাবে এলাকার মানুষ। দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে।

স্থানীয় কামরুল জামান, শহিদুল ইসলাম, এস. এম খায়রুজ্জামান বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য সরকার বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। এজন্য এলাকাবাসী আনন্দিত। তবে গত কয়েকদিন হলো নদীতে ভাঙনে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসটিসি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সরদার ফরিদ হোসাইন বলেন, ১০ ও ১৪নং পয়েন্টে আমরা কাজ শুরু করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মালামাল রাখার জায়গা পাচ্ছি না। এজন্য কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহায়তা নিচ্ছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে ৬শ' কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর স্পার বাঁধ থেকে উজানের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নদীর ডান তীরে স্ল্যাভ তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র: আরটিভি