চৈত্রের শেষ দিনে বাজার কাঁপালো ইলিশ

ফানাম নিউজ
  ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:৪১

চৈত্রের শেষ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় ইলিশের মোকাম বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ইলিশ। মূলত বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে চাহিদার তুলনায় ইলিশের কম সরবরাহ থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে গেছে বলে আড়তদার, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানিয়েছেন।

নগরীর পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বুধবার (১৩ এপ্রিল) এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ১ হাজার ৬২৫ টাকা। খুচরা বাজারে ওই ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

অথচ এক সপ্তাহ আগে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৫৫ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছিল ১ হাজার ৩৪৫ টাকা। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়।

পোর্ট মোকামের মেসার্স আব্দুল্লাহ মৎস্য আড়তের সত্ত্বাধিকারী ও জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জহির সিকদার জানান, মোকামে এক সপ্তাহ ধরে ইলিশের আমদানি কম হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৮০ মণের মতো ইলিশ আমদানি হয়েছে। চাহিদার চেয়ে অনেক কম। এক সপ্তাহ আগেও গড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মণ আমদানি হতো। অর্থাৎ আমদানি কম এবং অন্যদিকে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের চাহিদা বেশি ছিল। ফলে পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

ইলিশের আমদানি কম হওয়ার কারণ হিসেবে জহির সিকদার বলেন, জাটকা সংরক্ষণে এ সময়টাতে দেশের প্রধান কয়েকটি নদীর অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা পুরোপুরি বন্ধ থাকে। তাছাড়া যেসব নদীতে বা নদীর অংশে নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখানে জাল ফেলেও তেমন মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। ফলে মোকামে ইলিশের সরবরাহ কমে গেছে।

জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ও আড়তদার ইয়ার হোসেন জানান, সামুদ্রিক ইলিশ লবণাক্ত হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মিঠা পানির রূপালী ইলিশের কদর সব সময় একটু বেশি। তাই বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের চাহিদা থাকে সারাবছর। আর এ কারণেই বরিশালের ইলিশের বাজার সব সময় চড়া থাকে। সরবরাহ কম থাকলেও কয়েকদিন ধরে ইলিশের মোটামুটি ভালোই চাহিদা ছিল। কিন্তু চড়া দামের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদেরও ইলিশ কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

আড়তদার ইয়ার হোসেন বলেন, তাছাড়া নদ-নদীতে ইলিশ মিলছে না। যা ধরা পড়ছে, তা বেশির ভাগই ছোট আকারের। ছোট আকারের ইলিশের চাহিদা কম। পাইকাররা খোঁজেন বড় ইলিশ। যেমন আজ মোকামে আমদানি হওয়া বেশিরভাগ ইলিশ ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের। বড় সাইজ অর্থাৎ কেজি বা এর আশেপাশের সাইজের ইলিশের আমদানি ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ মণ। তাই বলা যায় ইলিশে খরা চলছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে দামে।

নগরীর চৌমাথা বাজারের গফফার সিকদার নামে এক মাছ বিক্রেতা জানান, খুচরা বাজারে দেড় কেজি সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে এ সাইজের ইলিশ বাজারে উঠেছে খুব কম। আর হাফ কেজি সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। গত কয়েকদিন ধরেই পাইকারি পর্যায়ে ইলিশের দাম ঊর্ধ্বমুখি। এ কারণে খুচরা বাজারেও ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জানান, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস বরিশাল ও আশপাশের মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, নয়াভাঙ্গুলী, গজারিয়া ও কীর্তণখোলার আংশিক অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। অভয়াশ্রমগুলোতে জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। তবে মে মাসের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আশা করছি বাজারে ইলিশ সরবরাহ বেড়ে যাবে। তখন দামও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

সূত্র: জাগো নিউজ