শিরোনাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্ত্রীসহ বাস করছেন ৭২ বছর বয়সী আবুল বাশার। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। তারপরও নিজ ঘরের বারান্দায় বসে থাকেন তৃপ্তি নিয়ে। মাথার ওপর ছাদটা দেখেন ঘুরেফিরে। হাসিমুখে জানালেন, তার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে তার একটা ঘর আছে।
বারান্দায় বসে আবুল বাশার বলেন, ‘কোনোদিন ভাবি নাই ঘর অইবো, ঘরে জানডা বাঁচে।’ এরপরই দু’হাত তুলে বলেন, ‘আল্লাহ তুমি শেখ হাসিনারে দেইখ্যা রাইখো।’
বাঞ্ছারামপুরের উজানচরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারি করে বানানো হয়েছে ১০১টি ঘর। ২ দশমিক ৪৮ একর জমিতে প্রথম পর্যায়ে ৬৪টি পরিবার এবং ২য় পর্যায়ে ৩৭টি পরিবারকে এখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে একটি মসজিদ আছে। আছে বিদ্যুৎ। পানির জন্য আছে গভীর নলকূপ। ১০১টি পরিবারের প্রায় পাঁচশ’ সদস্য বাস করছেন এখানে।
মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৬৫ হাজার ৪৭৪টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে।
১৯৯৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের আওতায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাঁচ জন এক পরিবার হিসেবে ঘর পাওয়া জনসংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার।
উজানচর প্রকল্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে তারা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এখন ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে তারা ছোট খামার ও সন্তানের লেখাপড়ায় খরচ করছেন।
অনেকের দৈনিক খাদ্যের চাহিদাও মিটছে বেঁচে যাওয়া সেই ভাড়ার টাকায়। আগে একবেলা না খেয়ে থাকতে হলেও এখন তা হচ্ছে না।
স্বামীহারা জানু বেগম এক কন্যা সন্তানের জননী। বাস করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে।
একসময় বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতেন। থাকতেন অন্যের বাড়িতে। মুজিববর্ষে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এতেই তার জীবনে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। তিনি এখন স্বাবলম্বী।
ঘরের বারান্দায় ছোট একটি দোকান সাজিয়েছেন জানু বেগম। ওতে উঠে আসে সংসারের খরচ। পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি বাগান করেও সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলার মিঠুন কুমার বিশ্বাস। স্ত্রী মৌসুমী রানী ও এক সন্তানসহ তিন সদস্যের পরিবার তার।
পেশায় দিনমজুর মিঠুন। গত ৮ বছর ধরে পরিবেশগত প্রতিকূলতার মধ্যে চালিয়ে আসছেন জীবনসংগ্রাম। নতুন ঘর পেয়ে তিনি ও তার স্ত্রী উচ্ছ্বসিত।
মিঠুনের স্ত্রী মৌসুমী রানী বলেন, ‘এত বছর দোচালা কুঁড়েঘরে ছিলাম। ঝড় আসলে যাইতাম আশ্রয়কেন্দ্রে। ঘর তছনছ হয়ে যাইতো। আবার ঠিক করা লাগতো। সেটা করতেই বছর পার। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিবেন শুইনা আবেদন করসিল আমার স্বামী। তারপর ঘর পাইলাম। প্রধানমন্ত্রী না দিলে এমন ঘর জীবনেও কপালে জুটতো না।’
বিয়ের পর থেকে স্বামীর ঘর বলতে ছিল দেবরের বাড়ির বারান্দা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মরিয়ম সেই বারান্দায় স্বামীর সঙ্গে সংসার করেছেন ৫০ বছর।
মাথা গোঁজার একটি স্থায়ী ঠিকানা করতে পারেননি খেটে খাওয়া এই দম্পতি। অবশেষে মুজিববর্ষে উপহারের ঘর পেয়ে স্বপ্ন বুনছেন দুচোখে।
মরিয়ম বললেন, ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই হইলো একটা। সরকার না দিলে কোনোদিনও সম্ভব ছিল না ঘর করার।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে দেখেছি অনেকে গরু পালন করছে, কৃষি করছে। যেসব গৃহহীন মানুষ সমাজে আগে নিগৃহীত ছিল, এমনকি বাবা-মাও যোগাযোগ রাখতো না।’
‘তাদের দেখতে এখন আত্মীয়রা আসছে। সমাজে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হতো। এখন তাদের একটি কালেকটিভ বারগেনিং পাওয়ার হয়েছে।’
সিনিয়র সচিব জানালেন, ‘স্থানীয়রাও পজিটিভলি নিয়েছে ঘর পাওয়া মানুষগুলোকে। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন