সালথা কাণ্ডের এক বছর, এখনও তদন্ত চলমান

ফানাম নিউজ
  ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৯
আপডেট  : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১১:২১

ফরিদপুরের সালথা কাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল রাতে লকডাউন কার্যকরের অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা উপজেলা সদরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে প্রায় কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদের বিনষ্ট হয়। নিহত হন দুজন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক ৮টি মামলা করে। এরমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত একটি মামলা ছাড়া অন্য মামলাগুলোর তদন্ত এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে এখনো দাখিল হয়নি পুলিশ প্রতিবেদন। এসব মামলাকে ঘিরে এখনো এলাকাছাড়া রয়েছেন সালথা উপজেলার বেশ কিছু মানুষ। এতে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে অনেক পরিবার।

যেখানে ঘটনার সূত্রপাত সেই ফুকরা বাজারের প্রায় সবগুলো দোকান বন্ধ রয়েছে ঘটনার পর থেকে। এতে দোকানের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য। তবে এই ঘটনার কিছু মূলহোতা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তারা সালথা উপজেলাতেই ঘোরাফেরা করেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

গত বছরের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারী নিয়ে তৎকালীন সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা হিরামণি স্থানীয় ফুকরা বাজারে গেলে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়ে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে হামলার শিকার হন। পরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সালথা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক আবু নাসেরের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সালথা থানার পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব পৌঁছে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন। পুলিশের গুলিতে আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সহিংসতার এ ঘটনায় সালথার বিভিন্ন সরকারি ভবন ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই সহিংসতার ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষকে আসামি করে ৮টি পৃথক মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৭টি মামলা সালথা থানা পুলিশ ও একটি মামলা ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। মামলায় এজাহার নামীয় ৩৮১ জন এবং সন্দেহভাজন ১৪৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ২২ জন। একজন আসামি আটকাবস্থায় মারা যান।

সালথার ঘটনায় পুলিশের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নান মিয়া বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই সালথার সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সালথা কাণ্ডের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোন্তাছির মারুফ বলেন, ফেসবুক পেজ পেট্রোলিং করে সালথার ঘটনার সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমে যেসকল ব্যক্তি জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি ডিবি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

সালথা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হামলার মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনার কিছু মূলহোতা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তারা প্রতিদিন থানা পুলিশের সামনে দিয়ে উপজেলায় ঘোরাফেরা করেন। আটককৃত আসামি যারা জামিনে এসেছেন তাদের মুখে আমরা শুনেছি, তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে যাদের নাম বলেছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করেনি। আমি আশা করবো পুলিশের অভিযোগপত্রে তাদের নাম থাকবে। তারা আইনের আওতায় এসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর শাস্তি পাবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত সঠিকভাবে ঘটনাগুলো তদন্ত করছে। যাতে কোনো অপরাধী ছাড় না পায়। একইসঙ্গে যেন কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি সাজা না খাটে সেদিকে খেয়াল রেখে তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ মামলাগুলো নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এরমধ্যে ডিজিটাল আইনে করা মামলা তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। বাকি মামলাগুলোর অভিযোগপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।

সূত্র: জাগো নিউজ