সুপেয় পানির অভাবে হাহাকার, প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না উপকূলবাসী

ফানাম নিউজ
  ২২ মার্চ ২০২২, ১০:৪৫

‘টিউবয়েলের পানিতে আর্সেনিক। সেটার পানি ব্যবহার করা যায় না। এক কলস খাবার পানির জন্য প্রতিদিন আমাদের মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পুকুর পাড়ে স্থাপিত ফিল্টার থেকে এক কলস খাবার পানি সংগ্রহ করি। বৃষ্টির সময় ট্যাংকিতে কিছু পানি ধরে রেখেছিলাম। সেটা এখন শেষ হয়ে গেছে।’

কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগরের বাসিন্দা আনিছা বেগম। সাতক্ষীরা উপকূলের প্রায় সব গ্রামের নারীদের কথা একই রকম। তাদের দিনের বড় একটি সময় পার হয় এক কলস সুপেয় পানি সংগ্রহের পেছনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদ নদীগুলোতে উজানের পানি না আসায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার বেশিরভাগ এলাকায় সুপেয় পানির চরম সংকট রয়েছে। বেড়েছে লবণাক্ততার প্রভাবও। ফলে দিন দিন সুপেয় পানির এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিপুল সংখ্যক মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য কিছু বেসরকারি সংস্থা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এর সুফল পায়নি স্থানীয়রা।

তবে জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সংকট নিরশনে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় নলকূপের পানি লবণাক্ত। অনেকে পুকুরের পানি পান করে। বড় প্লাস্টিকের ট্যাংকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়। কিন্তু তা দিয়ে বেশিদিন চলে না। বাধ্য হয়ে লবণাক্ত ও নোংরা পানি পান করে নানা রকম রোগে ভুগছে এখানকার মানুষ।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের সময় দুই দফা বেড়িবাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নে টানা দুই বছর জোয়ার ভাটি হয়েছে। লবণ পানির কারণে এখানকার সুপেয় পানির উৎসগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে এখনো মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যায়নি। এখানকার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছে।

সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গেল বছর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি ও গাবুরা ইউনিয়নের কিছু এলাকায় নতুন করে লবণ পানি প্রবেশ করে। ফলে সেখানকার মিষ্টি পানির বিভিন্ন উৎস একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন করে সুপেয় পানির উৎস তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র: জাগো নিউজ