শিরোনাম
কফিনে মোড়ানো মরদেহ। খোঁড়া হয়েছে কবর। জানাজার জন্য জড়ো হয়েছেন শতাধিক মানুষ। কিন্তু গৃহত্যাগী এক সন্তান হঠাৎ বাড়ি ফিরে বাবার মরদেহ দাফন বন্ধ করে দেন। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের শ্রীবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকালে অটোরিকশার ধাক্কায় মারা যান জালাল উদ্দিন (৭০)।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার(১৭ মার্চ) সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান জালাল উদ্দিন (৭০)। এরপর তার মরদেহ দাফনের সকল প্রস্ততি গ্রহণ করেন ৫ সন্তান ও স্বজনরা।
জালাল উদ্দিনের চার ছেলে ও দুই মেয়ে। মেজ ছেলে নুরুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ভালো ছিল না। অনেক বছর আগে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। বাবা-মার খোঁজও নেন না। মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে বাবা ও ভাইদের হুমকি-ধমকি দিতেন। বছর খানেক আগে এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের নামে জালাল উদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। গ্রাম্য সালিস হয়েছে বহুবার।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে জালালের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ সন্তান এবং আত্মীয়স্বজনরা তার জানাজাসহ সকল প্রস্ততি গ্রহণ করেন। কিন্তু জানাজার আগ মুহূর্তে হাজির হন মেজ ছেলে নুরুল ইসলাম।
জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে তিনি অভিযোগ করেন তার বাবাকে তিন ভাই মিলে হত্যা করেছে। ফোন পেয়ে ঘিওর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ গ্রামবাসীও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মরদেহ দাফনে অনুমতি দেওয়ার জন্য নুরুল ইসলামকে অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতেও সম্মতি দেননি নুরুল ইসলাম।
নিহত জালাল উদ্দিনের বড় ছেলে তারা মিয়া জানিয়েছেন, আমার ভাই নুরুল ইসলাম নেশাগ্রস্ত। সন্তানসহ স্ত্রীও তাকে ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে। এখন নুরুল ইসলাম কোথায় থাকে কি করে তা কেউ জানে না। বাড়িতে কারও খোঁজ খবর নেয় না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাবার সম্পত্তির ওয়ারিশ দাবি করে আসছিল। বাবা দিতে রাজি না হওয়ায় মারপিট করতে আসত। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মাতবরসহ বহু মানুষের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছে সে। বছর খানেক আগে তার বাবা নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন। এই রাগেই বাবার মরদেহ দাফন করতে দেয়নি নুরুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন মিয়া জানান, মৃত জালাল উদ্দিনের নামাজে জানাজা পড়তে তিনি শ্রীবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তার মতো অনেকেই এসেছিলেন। কিন্তু মেজ ছেলে নুরুল ইসলাম বাবার মরদেহ জানাজা বন্ধ করে পুলিশকে খবর দেন।
তিনি বলেন, জালাল অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন এটা গ্রামের সবাই জানেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম ভাইদের হয়রানি করার জন্যই মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে খবর দেন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রওশন আলম মোল্লাসহ স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ নুরুল ইসলামকে বাবার মরদেহ দাফন করার জন্য অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। পরে পুলিশ জালালের লাশ মর্গের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানিয়েছেন, ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুনরায় পুলিশ পাঠানো হয়। সুরতহাল রিপোর্ট এবং স্থানীয়দের তথ্যমতে জালাল উদ্দিন অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন। কিন্তু তার মেজ ছেলে নুরুল ইসলাম ৯৯৯ এ ফোন করে অভিযোগ করছেন তার ভাইয়েরা মিলে তার বাবাকে হত্যা করেছে। তাই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশাদ উল্লাহ জানান, কফিনে মোড়ানো অবস্থায় জালাল উদ্দিনের মরদেহ রাতে হাসপাতাল মর্গে পৌঁছেছে। শুক্রবার (১৮ মার্চ) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার(১৭ মার্চ) সকাল ৭ টার দিকে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে বাড়ির পাশে অটোরিকশায় ধাক্কায় গুরুতর আহন হন জালাল উদ্দিন। তাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মচারী ছিলেন।
সূত্র: আরটিভি