শিরোনাম
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সংবলিত পাঁচটি চেয়ার বানিয়ে চুয়াডাঙ্গার পাঁচ থানার ওসির কক্ষে রাখা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য এসব চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে জাতীয় পতাকা সংবলিত চেয়ার তৈরির বিষয়টিকে জাতীয় পতাকার অবমাননা বলছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসব চেয়ার থানা থেকে সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার সবকটি থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য ‘সংরক্ষিত চেয়ার’ রাখা হয়েছে ওসির কক্ষে। এমনকি চুয়াডাঙ্গার এসপির কার্যালয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য আলাদা চেয়ার বসানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে চেয়ারগুলো জেলার সবকটি থানায় পাঠানো হয়। চেয়ারগুলোর কাঠামো তৈরি করা হয়েছে জাতীয় পতাকার আদলে। চেয়ারগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজের রং।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, এসব চেয়ারে যদি কেউ বসে তাহলে জাতীয় পতাকার ওপরে বসা হবে। এতে জাতীয় পতাকার অবমাননা হবে। কাজেই তারা এসব চেয়ারে বসবেন না।
জাতীয় পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ ও এর সংশোধনী ২০২১-এ বলা আছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রতীক।’ বিধিমালার ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(ক) জাতীয় পতাকার সম্মান বজায় রাখতে হবে, (খ) পতাকা দ্বারা সম্মুখভাগ অথবা পশ্চাদভাগ কোনও অবস্থায় আচ্ছাদিত করা যাবে না। (গ) পতাকা কোনও ব্যক্তি বা জড়বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না, (ঘ) পতাকা কখনই উহার নিচের কোনও বস্তু যেমন, মেঝে, পানি কিংবা পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আমরা যে লাল-সবুজের পতাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই পতাকার ওপরে যদি আরাম করে বসি তাহলে পতাকার অসম্মান করা হবে। আমাদের সম্মান জানাতে গিয়ে এই চেয়ার বানিয়ে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা শাখার সদ্য সাবেক জেলা ইউনিটের কমান্ডার আবু হোসেন বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার কাছে এটি দুঃখজনক। আমি মনে করি, এখানে জাতীয় পতাকাকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলবো। যেন সব থানা থেকে জাতীয় পতাকার তৈরি চেয়ারগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।’
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইবাদত আলী বলেন, বিশেষ সম্মান পেতে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওই চেয়ারে বসে আমি জাতীয় পতাকার অবমাননা করতে পারি না। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যদি বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করতে হয়, তাহলে সেটি কাঠের তৈরি হলে সমস্যা কোথায়?। চেয়ার হলেই হলো, সেটি আবার বিশেষ হতে হবে কেন?
জীববনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত চেয়ারটি জাতীয় পতাকার মতো করে তৈরি করা হয়েছে। এসপি স্যারের নির্দেশে চেয়ারগুলো সব থানার ওসি তাদের কক্ষে রেখেছেন। আমিও রেখেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক বলেন, ‘থানায় সংরক্ষিত চেয়ারগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য দেওয়া হয়েছে। এসব চেয়ার জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে চেয়ারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবর্তন করে ফেলা হবে। আমরা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সম্মানে চেয়ারগুলো প্রতিটি থানার ওসির কক্ষে বসানো হয়েছে। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা প্রশ্ন তুলেছেন এসব চেয়ার জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি করা হয়েছে, সেহেতু তাদের সঙ্গে কথা বলে সরিয়ে ফেলা হবে। কেন তারা এই প্রশ্ন তুলেছেন, আমি জানি না। আমরা তো মুক্তিযোদ্ধাদের কবরেও জাতীয় পতাকা দিই। যাইহোক, মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন