শিরোনাম
ক্যালসিয়ামের ওষুধ সরবরাহ নেই, এমন তথ্য দিয়ে রোগীকে বিদায় দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সরকারি ফার্মেসির দায়িত্বে থাকার কর্মচারীরা। অথচ সেই ওষুধই পাওয়া গেল ফার্মেসিটির ভেতরের একটি টেবিলের ড্রয়ারে। এছাড়া দৈনিক চাহিদার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে বুঝে নিয়েছেন আরও বেশ কিছু ওষুধ, কিন্তু রোগীদের অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় কোন ধরনের কাগজ কিংবা চাহিদাপত্র ছাড়াই নিয়ে আসেন আরও অতিরিক্ত ওষুধ।
অথচ এসবের একটি ওষুধও রোগীর কাছে যায় না। দুর্নীতি দমন কমিশনের টানা চার ঘণ্টার অভিযানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ যেন শস্যের ভেতরে ভূত।
দুদক বলছে, যতজনকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি ওষুধ নিয়ে আসা হয় স্টোর থেকে। কিন্তু রোগী ওষুধগুলো সঠিকভাবে পায় না। এ বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে চান দুদকের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সঠিকভাবেই রেজিস্টার মেনটেইন করে কেন্দ্রীয় স্টোর থেকে ওষুধগুলো ফার্মেসি ও ওয়ার্ডগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যেহেতু প্রশ্ন ওঠেছে, তাই এ নিয়ে আরও স্বচ্ছ থাকতে দুদক পরামর্শ দিয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগীরা না পাওয়ায় দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিযোগ পায় দুদক। এ প্রেক্ষিতেই চমেক হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এরমধ্যে হাসপাতালের প্রধান ওষুধ স্টোর ও যন্ত্রপাতি স্টোর এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ওষুধ সরবরাহের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদক টিম। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ, সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক ও কনস্টেবল মো. ইমরান হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের উপ পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে দুটি বিষয় গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে। এরমধ্যে রোগীরা তাদের ওষুধ যথাযথভাবে পায় না। আর স্টোর থেকে দৈনিক চাহিদার বাইরে আরও অতিরিক্ত ওষুধ নিয়ে আসলেও তা তাদের খাতায় এন্ট্রি হয় না। তবে যেহেতু বড় একটি হাসপাতাল, তাই এ নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে এসব বিষয় জানা কঠিন। এ নিয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান প্রয়োজন আছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চমেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘রোগীরা যে ওষুধ পান না, তার কোথায় গড়মিল, স্টোরে নাকি ওয়ার্ডে, সে বিষয়ে দুদক টিম জানতে চেয়েছেন, আমি নিজেই উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। উনারা ওয়ার্ডে গেছেন, রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, উনারাও দেখেছেন সরকারি ওষুধ যেগুলো সাপ্লাই ছিল, তা যথার্থভাবেই রোগীরা পেয়েছেন। আর যেসব ওষুধ আমাদের সাপ্লাই ছিল না, এমন কিছু ওষুধ রোগীরা বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এদিক থেকে দুদক টিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি স্টাফ আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে গ্রেপ্তার করা হয়। চুরির ঘটনায় চমেকের স্টোর অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশও ঘটনাটি তদন্ত করছে।
সূত্র: আরটিভি