শিরোনাম
সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা যতই বলুন, বার্সেলোনা বড় দল হিসেবে ফিরেছে, তবু আগামীকাল দলটি এক কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে। ১৮ বছর পর ইউরোপা লিগে খেলতে নামবে বার্সা, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী নাপোলি। এ ম্যাচ তো বটেই ইউরোপা লিগে বার্সেলোনা কী করবে, কেমন করবে, এটার ওপর লাপোর্তার দাবির সত্যতা কিন্তু অনেকটাই নির্ভর করবে।
বায়ার্নের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বার্সেলোনা এবার কঠিন এক বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে। ইউরোপে দ্বিতীয় স্তরের লিগ ইউরোপা লিগের নকআউট পর্বে অন্যতম শক্তিশালী দলকেই তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে—নাপোলি। ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্বে হেরে বিদায় নেওয়ার পর এমন রূঢ় বাস্তবতার সামনে আর কখনোই পড়েনি বার্সেলোনা।
ঘটনাচক্রে লাপোর্তা সে বছরই বার্সেলোনার সভাপতির পদ গ্রহণ করেছিলেন। পরের ইতিহাসটা অবশ্য সবারই জানা। এক লিওনেল মেসি আর পেপ গার্দিওলার যুগলবন্দী বার্সেলোনাকে ক্রমশ পৌঁছে দিয়েছিল ইউরোপের শীর্ষ সারিতে। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে যা হয়েছিল, সেটির মতো কিছু না হলেও এর কাছেপিঠেও যদি কিছু হয়, তা-ই সই বার্সেলৈানা–সমর্থকদের জন্য।
মঙ্গলবার রাতে বার্সেলোনার সাবেক ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসিকে দেখা গেল পিএসজির জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। বার্সেলোনা ফুটবলাররা নিশ্চয়ই ম্যাচটা দেখেছেন। এ ধরনের লড়াইয়ে এত দিন ধরে বার্সেলোনাই তো অভ্যস্ত ছিল। ইউরোপা লিগের লড়াইটা তাই তাদের কাছে অন্য রকম লাগাটাই স্বাভাবিক।
তবে জাভি কোচ হয়ে আসার পর কিছু ইতিবাচক ব্যাপারও আছে ধুঁকতে থাকা বার্সেলোনার। বার্সেলোনা কিংবদন্তি দলকে মোটামুটি ঠিক লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে নিচ্ছেন বলে সবার ধারণা, যদিও এর মধ্যে বাজে পারফরম্যান্স দেখা গেছে। নেতিবাচক যে ব্যাপারগুলো ঘটছে, তার অর্থ, জাভি হার্নান্দেজের এখনো অনেক কাজ বাকি।
সাম্প্রতিককালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচটি আশাবাদী করেছে বার্সা ভক্তদের। সে ম্যাচে ৪-২ গোলের দারুণ জয়ে মৌসুমের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখায় বার্সা। কিন্তু এসপানিওলের বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্র বার্সাকে আবারও মাটিতে নামিয়েছে। ক্যাম্প ন্যুতে নাপোলির বিপক্ষে ইউরোপা লিগ ম্যাচের আগে এসপানিওলের বিপক্ষে ম্যাচটি আবারও চিন্তায় ফেলেছে সমর্থকদের।
নাপোলির বিপক্ষে ম্যাচটি তাই বার্সেলোনার বড় পরীক্ষাই। তবে তারুণ্যনির্ভর বার্সেলোনা ইউরোপা লিগে নিজেদের নামের ভার প্রমাণ করতে চাইবে। সিরি ‘আ’-তে তৃতীয় স্থানে থাকা নাপোলি ২৫ ম্যাচে গোল হজম করেছেন ১৭টি।
কোচ জাভি অবশ্য নাপোলিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বীই মনে করেন, ‘আমি মনে করি, নাপোলি চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই প্রতিদ্বন্দ্বী। এবারের ইউরোপা লিগে বার্সেলোনার সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ।’
অনেক দিন সিরি ‘আ’–তে গড়পড়তা মানে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাপোলি শিরোপা জেতার লক্ষ্যেই ঝাঁপায়। ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আমলে শেষবারের মতো লিগ জিতেছিল নাপোলি। তারা নিজেদের তৃতীয় সিরি ‘আ’ জয়কে পাখির চোখ করেছে অনেক দিন ধরেই। ম্যারাডোনা কিন্তু বার্সেলোনা ছেড়েই নাপোলিতে যোগ দিয়েছিলেন।
ইউরোপা লিগের এ ম্যাচের আগেও তাই ম্যারাডোনার নামটি খুব করেই আসছে। জাভি যেমন এ ম্যাচকে ম্যারাডোনাকে সম্মান জানানোর ম্যাচই মনে করেন, ‘ম্যাচটি হতে পারে ম্যারাডোনাকে সম্মান জানানোর।’
এ মুহূর্তে ইউরোপা লিগ জেতা ছাড়া বার্সার সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ওই যে লাপোর্তা যে বলছেন, তাঁরা আবার বড় দলের কাতারে ফিরছেন—কথাটি প্রমাণ করতেই ইউরোপা লিগ জেতাটা জরুরি। যে দলটি ২০০৪ সালের পর তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে, তাদের জন্য তো বটেই।
কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগের সবশেষ ছয় ম্যাচে গোল করতে পেরেছে মাত্র দুটি। লা লিগায় এ মুহূর্তে তারা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে পিছিয়ে ১৫ পয়েন্ট। কোপা দেল রে’র কোয়ার্টার ফাইনালেও হেরেছে তারা।
লা লিগা পয়েন্ট টেবিলে এখন চারে বার্সা। লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী মৌসুম নিশ্চিত করা। বার্সেলোনা খেলোয়াড়েরা জানেন, তাঁরা যদি মে মাসে ইউরোপা লিগ জিততে পারেন, তাহলেই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিশ্চিত। ইউরোপা লিগ জয় ও চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত হওয়াটা লাপোর্তার আর্থিক শৃঙ্খলা আনা এবং ক্লাবের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিলে উয়েফার অর্থ পুরস্কার ছিল ছয় কোটি ইউরো। সমপরিমাণ অর্থ তারা পাবে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিততে পারলে। এতে ক্লাবের জন্য আর্থিক দিক দিয়ে খুব বড় লাভ না হলেও কিছু অর্থ তো কোষাগারে ঢুকবে! এ মুহূর্তে বার্সেলোনার দেনাই বিলিয়ন ইউরোর বেশি। দলের পুনর্গঠনে জাভির পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও তো অর্থ প্রয়োজন, যেখানে বার্সেলোনা জুনের দলবদলে সময়ের সেরা স্ট্রাইকার বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের আর্লিং হরলান্ডকে দলে আনতে চায়।
তবে ব্যাপারটা যে নাপোলিকেই হারানো, তা নয়। ইউরোপা লিগে নাপোলি শক্তিশালী, কিন্তু ডর্টমুন্ড, আতালান্তা, ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ও পোর্তোর কথা ভুলে গেলেও চলবে না। সব মিলিয়ে ইউরোপা কাপও বার্সেলোনার কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই। এতে জিততে যে রসদ প্রয়োজন, সেটি কি দলটার আছে? সময়ই তা বলে দেবে।