শিরোনাম
সকাল থেকে মেঘলা ছিল আকাশ, সূর্য উঁকি দিয়েছে বিকেলের দিকে। সন্ধ্যায় মিরপুরে নামল ঝুম বৃষ্টি। শীতের সন্ধ্যায় এমন বৃষ্টি খুব একটা দেখা যায় না। তবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস যে পারফরম্যান্স দেখাল, সেটিই যেন এবারের বিপিএলে নিয়মিত চিত্র।
চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকার কাছে হেরে ছন্দপতন হয়েছিল কুমিল্লার, টানা তিন ম্যাচ জিতে প্রথম হারে দলটি। ঢাকায় ফিরে আবার পুরোনো রূপে দেখা গেল কুমিল্লাকে। প্রথমে বিপিএলের এই মৌসুমে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, ভালো একটা অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম থামল ১৩৮ রানেই। পরে অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ৬২ বলে অপরাজিত ৮১ এবং লিটন দাসের ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ৯ বল ও ৯ উইকেট বাকি থাকতেই ১৪৪ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যায় কুমিল্লা।
১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে রান তাড়ায় লিটনের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে রীতিমতো ভুগছিলেন ইমরুল। চতুর্থ ওভারে শরীফুল ইসলামের পরপর তিন বলে কাট করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন তিনবারই। সে ওভারে একটা ছয়ের পর আরেকটি চার মারলেন, ১৫ বলে ৯ রান থেকে ইমরুলের স্কোর গিয়ে দাঁড়াল ১৮ বলে ২০ রানে। ইমরুল ও কুমিল্লাও যেন পথ পেয়ে গেল তাতেই। পাওয়ারপ্লের ৫ ওভারেই কুমিল্লা তোলে ৪১ রান।
লক্ষ্য খুব বড় নয় বলে দেখেশুনে খেলার সুযোগটাও সব সময়ই ছিল ইমরুলদের। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে সেটিই করলেন তিনি। মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজ ও বেনি হাওয়েল একটু আঁটসাঁট বোলিংয়ের চেষ্টা করলেও চাপ ধরে রাখতে পারেননি। ১২তম ওভারে তো মিরাজকেই তিন ছয় মেরেছেন ইমরুল ও লিটন মিলে। আগের ৩ ম্যাচে ৭ উইকেট পাওয়া পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে বোলিংয়ে আনতে অবশ্য ১৩তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক নাঈম ইসলাম। তবে ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণের প্রায় পুরোটাই নিয়ে নিয়েছে কুমিল্লা।
সেই মৃত্যুঞ্জয়ের বলেই তুলে মারতে গিয়ে এরপর ক্যাচ দেন লিটন, তবে তাতে কিছু যায়–আসেনি আর। ইমরুল অর্ধশতক পূর্ণ করেছিলেন ৩৭ বলে, শেষ পর্যন্ত ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার ও ৫টি ছয়। ৩৫ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করা লিটন ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি ছয়।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় বলেই চ্যাডউইক ওয়ালটনকে হারায় চট্টগ্রাম, নাহিদুল ইসলামের বলে ক্যাচ দেন তিনি। সুনীল নারাইন ও মঈন আলী—কুমিল্লার ‘আকাঙ্ক্ষিত’ দুই অলরাউন্ডার আজই প্রথমবার মাঠে নামলেন। ইমরুল অবশ্য শুরুতে ভরসা রাখলেন স্থানীয় দুই স্পিনার নাহিদুল ও তানভীর ইসলামের ওপরই। নারাইনকে এনেছিলেন চতুর্থ ওভারে, মঈন আসেন সপ্তম ওভারে। দুজন মিলে শেষ পর্যন্ত ৭ ওভারে দিয়েছেন ৫৯ রান, থেকেছেন উইকেটশূন্য।
শুরুর ধাক্কা সামলে নিয়ে উইল জ্যাকস ও আফিফ হোসেন ভালো একটা ভিত গড়েছিলেন চট্টগ্রামের। দুজনের ৬১ রানের জুটি ভাঙে তানভীরের নিচু হওয়া বলে আফিফ বোল্ড হলে। এরপর শামীম হোসেনের সঙ্গে জ্যাকসের জুটিতে ওঠে আরও ৩৭ রান। ১৩তম ওভারের সময় নামে বৃষ্টি, ম্যাচের চিত্রটা বদলে যায় এরপরই।
বৃষ্টি–বিরতির পর ১ বল পরই আসেন মোস্তাফিজ। থিতু দুই ব্যাটসম্যান শামীম ও জ্যাকস দুজনকেই এক ওভারে ফেরান তিনি। ২২ বলে ২৬ রান করা শামীম পয়েন্টে, ৩৭ বলে ৫৭ রান করা জ্যাকস ক্যাচ দেন লং-অনে। নিজের পরের ওভারে আবার জোড়া আঘাত করেন মোস্তাফিজ, এবার ফেরেন নাঈম ও হাওয়েল। নাঈমের ফিরতি ক্যাচটা দারুণ রিফ্লেক্সে নেন মোস্তাফিজ, হাওয়েল স্লোয়ার বুঝতে না পেরে আলগা শটে ধরা পড়েন মিড-অফে।
শেষ ওভারে এসে মিরাজকে আউট করে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। বৃষ্টির পর ৩১ বলে মাত্র ৩০ রান তুলতে পারে কুমিল্লা।
৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে কুমিল্লা এখনো টেবিলের শীর্ষে। আর টানা ৩ ম্যাচ হারার পর চট্টগ্রাম আছে শুধু তলানিতে থাকা সিলেট সানরাইজার্সের ওপরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮ ওভারে ১৩৮/৮ (জ্যাকস ৫৭, আফিফ ২৭, শামীম ২৬, আকবর ১২; মোস্তাফিজুর ৫/২৭, নাহিদুল ১/২১, তানভীর ১/২১)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: (১৮ ওভারে লক্ষ্য ১৪৪) ১৬.৩ ওভারে ১৪৮/১ (ইমরুল ৮১*, লিটন ৫৩; মৃত্যুঞ্জয় ১/২১)
ফল: কুমিল্লা ডিএলএস পদ্ধতিতে ৯ উইকেটে জয়ী