রাতের শিশিরে সাকিবদের দিন দেখাল কুমিল্লা

ফানাম নিউজ
  ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১১

রাতের ম্যাচে শিশির পড়ায় উইকেটের আচরণ বদলে যাচ্ছে বিপিএলে। দিনের ম্যাচে দলগুলো রান তুলতে ভুগলেও রাতে আসছে বড় স্কোর। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যার ম্যাচে আগে ব্যাট করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস তুলেছে ১৫৮ রান। এরপর কুমিল্লার নাহিদুল ইসলাম এবং দলের বাকি বোলাররা মিলে যা করলেন, তাতে এবার বিপিএলে দিনের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের কথা মনে করাল বরিশাল।

বিপিএলে ‘মিতব্যয়ী’ বোলিংয়ের রেকর্ড–ছোঁয়া নাহিদুলের পর বাকিদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে বরিশাল গুটিয়ে যায় ৯৫ রানেই। এ মৌসুমে কুমিল্লার ৬৩ রানের জয়টিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের। প্রথম দুই ম্যাচই জিতল কুমিল্লা, আর তিন ম্যাচে দ্বিতীয় হার বরিশালের।

বরিশালের রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই আঘাত করেন নাহিদুল। স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন সৈকত আলী। করিম জানাত অবশ্য প্রথম দফায় ক্যাচটা নিতে পারেননি, তবে হাত ফসকে বের হয়ে গেলেও বল পড়ে করিমের পায়ের ওপর। সামনে ঝুঁকে ক্যাচটা নেন তিনি।

দ্বিতীয় ওভারে নাহিদুল ফেরান বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব, টাইমিং করতে পারেননি ঠিকঠাক। মিড-অন থেকে পেছন ছুটে ভালো ক্যাচ নেন ইমরুল। পাওয়ারপ্লের মধ্যে বরিশাল হারাতে পারত আরেকটি উইকেট, কিন্তু নাজমুল হোসেনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন ফাফ ডু প্লেসি।

মোস্তাফিজকে পরের ওভারে সরিয়ে নেন ইমরুল, তাঁর জায়গায় আসা শহীদুল ইসলাম ছিলেন একটু খরুচে—২ ওভারে দেন ১৯ রান। বরিশালের সুখস্মৃতিও বলতে গেলে শেষ ওখানেই। সপ্তম ওভারে করিম জানাতের বলে বোল্ড হন তৌহিদ হৃদয়, বরিশাল উইকেট হারাতে শুরু করে নিয়মিত বিরতিতে।

পাঁচে ব্যাটিংয়ে আসা ক্রিস গেইল ঝড় তুলতে পারেননি, নাহিদুলের তৃতীয় শিকার তিনি। নিজের শেষ ওভার করতে আসা নাহিদুলকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে গেইল হন স্টাম্পিংয়ের শিকার। 

৪ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন নাহিদুল, বিপিএলে মিতব্যয়ী বোলিংয়ে শহীদ আফ্রিদির রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি।

নুরুল হাসান এরপর ১৪ বলে করেছেন ১৭ রান, তবে ডোয়াইন ব্রাভো ও জিয়াউর রহমান রানই করতে পারেননি। এরপর লিনটটের ক্যাচ দিয়ে দায়মোচন করেন ডু প্লেসি। তানভীরের বলে তুলে মেরেছিলেন লিনটট, লং-অফে প্রথমে লাফিয়ে বলটা ধরেন ডু প্লেসি। এরপর বাউন্ডারির ভেতরেই ‘ল্যান্ড’ করেন, ভার সামলাতে ওপাশে চলে গেলেও বলটা ছুড়ে দেন সময়মতো। ভেতরে এসে এরপর সম্পন্ন করেন ক্যাচ।

১৮তম ওভারে গিয়ে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তোলেন নাজমুল হোসেন, যিনি নেমেছিলেন ইনিংস উদ্বোধন করতে। শেষ পর্যন্ত এ বাঁহাতি করেন ৪৭ বলে ৩৬ রান। শহীদুল, তানভীর ও করিম নেন ২টি করে উইকেট, ১টি নিয়েছেন মোস্তাফিজ।

এর আগে রাতের ম্যাচ হলেও বরিশাল নেমেছিল স্পিন-সমৃদ্ধ আক্রমণ নিয়ে।

আলজারি জোসেফ ও শফিকুল ইসলামকে বাদ দিয়ে খেলানো হয় দুই স্পিনার নাঈম হাসান ও জেক লিনটনকে নিয়ে। প্রথম ৮ ওভারই স্পিনারদের দিয়ে করান অধিনায়ক সাকিব। নিজে প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ১ রান, কিন্তু পরের ২ ওভারে তাঁর ও নাঈমের ওপর চড়াও হন কুমিল্লার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ডেলপোর্ট ও মাহমুদুল হাসান। আসে ২৮ রান।

নিজের পরের ওভারে অবশ্য আঘাত করেন নাঈম। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ডেলপোর্ট। ফাফ ডু প্লেসিকে এরপর থিতু হতে দেননি সাকিব। মিড-অনে জিয়াউরের হাতে ক্যাচ দেন ডু প্লেসি। সিলেট সানরাইজার্স বোলার নাজমুল ইসলামের মতো ভারতীয় সিনেমা ‘পুষ্পা’ অনুকরণে উদ্‌যাপন করেন সাকিবও।

২ উইকেট হারানো কুমিল্লা পাওয়ারপ্লেতে তোলে ৪৭ রান। মাঝের ওভারগুলোতে রানের গতিটা ঠিক ধরে রাখতে পারেনি তারা। একদিকে বিপিএল অভিষেক হওয়া মাহমুদুল হাসান টিকে ছিলেন। অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ১৭ বলে ২৪, তবে এরপর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটিতে ৪৪ রান তুলতে লাগে ৪০ বল।

৯ রানে সৈকত আলীর হাতে জীবন পাওয়া ইমরুল ফেরেন ১১ বলে ১৫ রান করে, সেবারই প্রথম বোলিং করতে আসা ডোয়াইন ব্রাভোর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। মাহমুদুল থামেন অর্ধশতক থেকে ২ রান দূরে। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার লিনটটের বাইরের বলে আলগা শটে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন, ইনিংসে এ ডানহাতি মারেন ৬টি চারের সঙ্গে ১টি ছয়।

পরের ওভারে সাকিব এসে ফেরান মুমিনুলকে। ২৩ বলে ১৭ রান করা মুমিনুল গিয়ার বদলানোর চেষ্টায় হন স্টাম্পিং। ব্রাভো এসে পরপর দুই বলে ফেরান মাহিদুল ইসলাম ও নাহিদুল ইসলামকে। অন্যদিকে করিম জানাত অবশ্য আক্রমণ শুরু করেন তার আগেই।

সাকিবকে আগেই একটা ছয় মেরেছিলেন করিম, এরপর এক্সট্রা কাভার দিয়ে জিয়াউরকে মারেন আরেকটি। শেষ ওভারে ব্রাভোর লো ফুলটসে শুধু ব্যাট চালিয়ে দারুণ টাইমিংয়ে মারেন আরেকটি। শেষ ২ ওভারে কুমিল্লা তোলে ২৪ রান, ১৬ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন করিম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ১৫৮/৭ (ডেলপোর্ট ১৯, মাহমুদুল ৪৮, ডু প্লেসি ৬, ইমরুল ১৫, মুমিনুল ১৭, করিম ২৯*, মাহিদুল ৮, নাহিদুল ০, শহীদুল ৫; সাকিব ২/২৫, নাঈম ১/৩১, তাইজুল ০/২২, লিনটন ১/১৮, ব্রাভো ৩/৩০, জিয়াউর ০/২৭)

ফরচুন বরিশাল: ১৭.৩ ওভারে ৯৫ (সৈকত ০, নাজমুল ৩৬, সাকিব ১, তৌহিদ ১৯, গেইল ৭, নুরুল ১৭, ব্রাভো ০, জিয়াউর ০, লিনটন ৮, নাঈম ০, তাইজুল ২; নাহিদুল ৩/৫, মোস্তাফিজ ১/২২, শহীদুল ২/২২, তানভীর ২/১৯, করিম ২/২৬)।

ফল: কুমিল্লা ৬৩ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাহিদুল ইসলাম।