শিরোনাম
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেই নামতে পারত আফগানিস্তানের রূপকথার এমন রাত। সেদিন মুম্বাইয়ের লাল পিচে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল খেলেছিলেন ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসটি। আজও সেই ম্যাক্সওয়েল হয়ে উঠেছিলেন দেয়াল। ৪১ বলে ৫৯ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের কক্ষপথেই রেখেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তাকে ফিরিয়েছিলেন গুলবাদিন নাইব। আফগানিস্তানের জয় তখন থেকেই হাতের মুঠোয়।
১৫তম ওভারের পর থেকেই একটি করে উইকেটের পতন হয়েছে। আসেনি কোনো বাউন্ডারি। হাতের বাইরে থাকা ম্যাচটা আফগানিস্তান নিজেদের কাছে নিয়ে এসেছে সেখানেই। নিউজিল্যান্ডকে বিদায় করে সুপার এইটে এসেছিল আফগানরা। বিশ্বকাপের আফগান জয়যাত্রার গল্পে ওই উপাখ্যানই হয়ত যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আফগান কাবুলিওয়ালাদের ঝুলিতে যেন জমা ছিল আরেক রূপকথা। ২১ রানের জয়ে সেই গল্পের আরেক উপাখ্যান লিখলেন গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, রহমানউল্লাহ গুরবাজরা।
সেন্ট ভিনসেন্টে আগে ব্যাট করে আফগানিস্তান তুলেছিল ১৪৮ রান। ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর আকস্মিক ধস না নামলে সেটা হতে পারত আরও বড়। কিন্তু যা হয়েছে বোলিং সহায়ক উইকেটে সেটাই ছিল যথেষ্ট। বল হাতে পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই তিন উইকেট তুলে নেন আফগান বোলাররা। মাঝে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়তে হলেও, শেষদিকে আরেকবার নিজেদের বোলিং কারিশমা দেখালেন এশিয়ান দেশটির বোলাররা।
ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে এটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের প্রথম জয়। এই জয়ের ফলে নিজেদের সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রেখেছে আফগানিস্তান। একইসঙ্গে সমীকরণের মারপ্যাঁচে বাংলাদেশের স্বপ্নটাও টিকে রইল ভালোভাবেই। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটা এখন অজিদের জন্য ডু অর ডাই ম্যাচ।
১৪৯ রান করতে পারলেই সেমিফাইনাল। আর সেমির দৌড়ে টিকে থাকতে আফগানিস্তানের জয়ের বিকল্প নেই। এমন এক সহজ সমীকরণের ম্যাচে প্রথম দফায় এগিয়ে ছিল আফগানিস্তানই। ৩ বলের মাথায় নাভিন উল হক ফেরালেন ট্রাভিস হেডকে। এরপর গুণে গুণে পার হলো দুই ওভার। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই আবার নাভিনের আঘাত। এবার মিডঅফে ক্যাচ দিলেন মিচেল মার্শ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অভিজ্ঞতার যুদ্ধে জয় পেলেন মোহাম্মদ নবী। ফেরালেন তারই মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নারকে।
স্টয়নিসকে নিয়ে খেলতে থাকেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়া হারার আগে হারতে জানে না। সেটাই দুজনে মিলে প্রমাণ করলেন যেন অনেকটা সময় ধরে। এরপরেই দৃশ্যপটে হাজির ম্যাচ সেরা গুলবাদিন নাইব। একের পর এক স্লোয়ার ছেড়েছেন। লেন্থ ভ্যারিয়েশন কাজে লাগিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া তাতে হয়েছে দিশেহারা। ২০ রানে ৪ উইকেট তার ঝুলিতে।
যোগ্য সঙ্গ পেয়েছেন রশিদ খান, ফজল হক ফারুকিদের কাছ থেকে। ১৫তম ওভার থেকে পরের প্রতিটি ওভারেই অন্তত ১টি করে উইকেট তুলে নিয়েছে আফগান বোলাররা। সেখানেই ম্যাচের গতিটা চলে যায় আফগানিস্তানের হাতে। ম্যাথু ওয়েড আর টিম ডেভিড ফেরার পর খুব একটা কিছু করার ছিল না অজিদের। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। আফগানিস্তানের ১৪৮ রানের জবাবে অজিরা থামল ১২৭ রানে। ২১ রানের জয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের কথা নতুনভাবে জানান দিল আফগানিস্তান।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানের ১১৮ রানের পার্টনারশিপে বড় স্কোরের ভিত পেয়েছিল আফগানিস্তান। যদিও সেখান থেকে খুব ভাল কিছু করে দেখাতে পারেনি বাকিরা। একের পর এক উইকেট হারিয়ে নিজেদের ওপরেই চাপ বাড়িয়েছিল ওমরজাই, করিম জানাতরা। কিন্তু ১৪৯ রানের সেই লক্ষ্যটাই সেন্ট ভিনসেন্টের পিচে অজিদের সামনে হয়ে দাঁড়ায় বড় কিছু।