শিরোনাম
আগে কিংবা পরে, ব্যাটিং ব্যর্থতা পিছুই ছাড়ছে না বাংলাদেশের। যার ফলে বারবার বিফলে যাচ্ছে বোলারদের লড়াই। আরও একবার ব্যাটাররা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। বিশ্বকাপের এক সপ্তাহ আগে নিউজিল্যান্ডের কাছে যাচ্ছেতাইভাবে সিরিজ হারলো টাইগাররা।
মঙ্গলবার মিরপুরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৯১ বল হাতে রেখে পাওয়া জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে কিউইরা। সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
লক্ষ্য মাত্র ১৭২ রানের। বাংলাদেশের বোলাররা আর কীইবা করতে পারতেন! তবে দারুণ বোলিংয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। এমনকি হ্যাটট্রিক বলটায় আবেদনও হয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল একটুর জন্য ব্যাটে স্পর্শ করেনি কিউই ব্যাটার হেনরি নিকোলসের।
তাতে দুর্দান্ত এক ওভার করেও হ্যাটট্রিক পাওয়া হয়নি শরিফুলের। ইনিংসের দশম ওভারে বাঁহাতি এই পেসার টানা দুই বলে ফিরিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের ফিন অ্যালেন আর ডিন ফক্সক্রফটকে।
এর মধ্যে অ্যালেন (২৬ বলে ২৮) শরিফুলের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ হন নাসুম আহমেদের। পরের বলে শরিফুল দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ফক্সক্রফটকে। ৪৯ রানে ২ উইকেট হারায় কিউইরা।
তবে তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়ং আর হেনরি নিকোলস ৮১ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথ গড়ে দেন। ৮০ বলে ১০ চার আর ১ ছক্কায় ৭০ করা ইয়ংকে বোল্ড করে জুটিটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। নিকোলস ৫০ আর টম ব্লান্ডেল ২৩ রান নিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে বাংলাদেশের একের পর এক ব্যাটার যেন কেবল হাজিরা দিয়ে গেলেন। কারও মধ্যেই দলকে বাঁচানোর সেই চেষ্টাটা দেখা গেলো না। ব্যতিক্রম ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একাই অনেকটা সময় লড়েছেন তিনি। যদিও তার ইনিংসটি শেষ হয়েছে রিভার্স সুইপের মতো শট খেলে।
তারপরও দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে শান্তই যা একটু ভরসা দিয়েছেন। মিরপুরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩৪.৩ ওভারে ১৭১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ সিরিজ জিততে নিউজিল্যান্ডের দরকার ১৭২।
দলের ব্পিদে একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন। বেশ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটিও তুলে নেন শান্ত। নিজের আগের দুই ইনিংসেও (এশিয়া কাপে ৮৯ ও ১০৪) রান করেছিলেন তিনি।
দুর্দান্ত ধারাবাহিক এই ব্যাটার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিরেও রান পেলেন। কিন্তু তার দায়িত্বশীল ইনিংসটি থামলো রিভার্স সুইপের মতো অদূরদর্শী শট খেলে।
কিউই স্পিনার ম্যাকঞ্চির শিকার হয়ে ফেরার আগে ৮৪ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৭৬ রান করেন শান্ত। দলীয় ১৬৮ রানে তিনি সপ্তম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার পর মাত্র আর ৩ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। ৩৪ রানে টাইগাররা হারিয়েছে শেষ ৬ উইকেট।
কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনে ৩৪ রানে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার ট্রেন্ট বোল্ট আর কোলে ম্যাকঞ্চির।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারে সুযোগ পাওয়া তিন তরুণ ব্যাটারই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
অ্যাডাম মিলনেকে ড্রাইভ করতে গিয়ে বল ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন অভিষিক্ত জাকির হাসান (১)। আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও বিদায় নেন খুব দ্রুত।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি মোকাবেলা করতে এসেই অফ স্ট্যাম্পের ওপর রাখেন বোল্ট। খোঁচা দিতে যান তামিম। বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে। ফিন অ্যালেন ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন। ৫ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ তামিম।
তাওহিদ হৃদয় এশিয়া কাপে একটি ম্যাচ ছাড়া প্রায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। আজও তিনি ব্যর্থ হলেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৭ বলে ১৮ রান করে বিদায় নিলেন তিনি।
মুশফিকুর রহিমও সেট হয়ে আউট হন। যদিও তার আউটটা ছিল কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক। ফার্গুসনের বল ডিফেন্ড করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। বল ব্যাটে লেগে ড্রপ খেয়ে উইকেটে লেগে যায়। মুশফিক পা বাড়িয়ে চেষ্টা করেছিলেন আটকানোর, পারেননি।
মুশফিক-শান্তর জুটিতে আসে ৫৯ বলে ৫৩ রান। ২৫ বলে ১৮ করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। ৮৮ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন শান্ত। তবে মাহমুদউল্লাহ সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিলনের দারুণ এক ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন তিনি। ভাঙে ৫৫ বলে ৪৯ রানের জুটি।