শিরোনাম
দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তামিম ইকবাল। তারকা এই ওপেনারের আচমকা এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই। এরপর তামিম ইকবালকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তামিম।
এরপর তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে ‘না’ বলা সম্ভব নয়। স্ত্রী আয়েশা ইকবাল ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি সংযুক্ত করে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে না বলতে পারিনি।’
অনেকেই অবশ্য মনে করছেন তামিম ফিরে আসলেও দিনের শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনিশ্চয়তা থেকেই গেল। কেননা তিন মাসও বাকি নেই বিশ্বকাপের। তার আগে এ ধরনের ঘটনা দলের মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে কি না, তা সময়ই বলবে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত যে নাটকের পর নাটক চলল, তা পাঠকরা এক নজরে দেখে নিন:
গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ম্যাচ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট কি না?
জবাবে তামিম বলেন, এখন মনে হচ্ছে, ‘আমি প্রস্তুত। তবে এটা বলব না যে, শতভাগ। ম্যাচ চলাকালে যদি আমার মনে হয় যে, ঠিক প্রস্তুত নই বা এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা হলে আমি ও মেকেল টিম মিলে সিদ্ধান্ত নেব। আমার মনে হয়, আমারও দেখতে হবে যে, কতটা মানিয়ে নিতে পারছি বা পারছি না। তবে আমি এ রকম কোনো কাজ করব না, যেটায় দল ভুগবে। কারণ, আমি সবসময় বলি যে, কোনো ব্যক্তির চেয়ে দল আগে আসে।’
এই সংবাদ সম্মেলনের পরই মূলত ঘটনার সূত্রপাত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, এটা তো পাড়ার ম্যাচ নয়! আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এমন সিরিজে়র আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট নয়। কিন্তু খেলবে, খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো কোনো পেশাদার ক্রিকেটারের আচরণ হতে পারে না!
তামিমের এই ‘চোট নিয়েও খেলব’ বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্টও। সংবাদমাধ্যমের খবর ছিল, অধিনায়কের ওপর রেগে যান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ। বুঝিয়ে দেন, একজন ক্রিকেটার পুরো ফিট না হলে তাকে খেলতে নামানোর পক্ষপাতী তিনিও নন।
এরপর বুধবার আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। তামিম যে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, তা সেদিনই বোঝা গিয়েছিল। কথা মতোই প্রথম এক দিনের ম্যাচে খেলেছিলেন তামিম। ১৩ রান করেছিলেন। কিন্তু ম্যাচের পরেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হঠাৎ জানিয়ে দেন, তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকছেন।
পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
বিদায় বেলায় কান্নায় ভেঙে পড়া তামিম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’
এই তারকার অবসর ইস্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই ইস্যু নিয়ে সেদিনই রাত ১০টায় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে সভা ডাকে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা যায়, বৈঠক শেষে রাত ১১টায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
অবসর ভেঙে দেশসেরা ওপেনার তামিম দলে ফিরে আসুক, সেটি চান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গতকাল বিসিবির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এ কথা বলেন তিনি।
পাপন বলেন, ‘তামিমের সিদ্ধান্ত ইমোশনাল হতে পারে। তার এমন সিদ্ধান্ত পরিকল্পিত কি না এটা দেখার বিষয়। তবে এই ঘটনায় আমি অবাক হয়েছি। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। আমি তাকে ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু সে কোনো উত্তর দেয়নি।’
শুক্রবার সকালেই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকা আসেন তামিম ইকবাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে গণভবনে দেখা করতে যান তিনি। অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলতেই তাকে প্রধানমন্ত্রী ডেকেছেন বলে জানা গেছে। তামিমের সঙ্গে গণভবনে যান বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। এ ছাড়া তামিমের স্ত্রী আয়েশা ইকবালও ছিলেন সঙ্গে।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তামিম। তবে অবসর থেকে ফিরলেও চলমান আফগানিস্তান সিরিজের বাকি ২ ম্যাচে খেলবেন না তামিম। আপাতত দেড় মাসের বিশ্রামে থাকবেন তিনি। এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও দলে ফিরবেন তিনি।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বের হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে তামিম বলেছেন, ‘আজ দুপুরবেলা প্রধানমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। উনার সঙ্গে আমরা অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। উনি আমাকে খেলায় ফিরে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ, আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। এতে মাশরাফি ভাই ও পাপন ভাইয়ের বড় ভূমিকা ছিল। মাশরাফি ভাই আমাকে ডেকে নিয়েছেন।