শিরোনাম
লিগপর্বে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে ছিলো দিল্লি ক্যাপিট্যালস। ফলে ফাইনালে ওঠার জন্য প্লে-অফ পর্বে তাদের সামনে ছিলো দুইটি সুযোগ। কিন্তু একটিও কাজে লাগাতে পারলো না তারা। ঠিক বিপরীত অবস্থা থেকে জোড়া বাধা পেরিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে সাকিব আল হাসানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
দিল্লিকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর দিল্লিকে ৩ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট পেয়েছে কলকাতা। প্রথমে চেন্নাই সুপার কিংস ও পরে কলকতা- আসরের দুইটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচেই হেরে তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো গত আসরের রানার্সআপ দিল্লি।
প্রথম কোয়ালিফায়ার জিতে আগেই ফাইনালে যাওয়া চেন্নাই ও কলকাতার মধ্যে হবে এবারের শিরোপার লড়াই। দুই দল এর আগে ২০১২ সালেও ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো। সেই ম্যাচ জিতে নিজেদের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছিলো কলকাতা।
এবার তৃতীয় শিরোপার সন্ধানে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের বিপক্ষে খেলবেন ইয়ন মরগ্যানরা। এর আগে দুইবার (২০১২ ও ২০১৪) ফাইনাল খেলে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা। অন্যদিকে নবম ফাইনালের অপেক্ষায় থাকা চেন্নাই আগের আট ফাইনালের ম্যাচে হেরেছে পাঁচটিতে।
বুধবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আগে ব্যাট করে মাত্র ১৩৫ রানে থেমে যায় দিল্লির ইনিংস। জবাবে ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পরেও ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে যেতে হয়েছে কলকাতাকে। শেষপর্যন্ত রাহুল ত্রিপাঠির ছয়ের মারে এক বল আগে ম্যাচ জিতে নেয় কলকাতা, পেয়ে যায় ফাইনালের টিকিট।
১৩৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন কলকাতার দুই ওপেনার শুভমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। মনে হচ্ছিলো, পুরো ১০ উইকেটেই জিতবে তারা। কিন্তু ইনিংসের ১৩তম ওভারে কাগিসো রাবাদার বলে সাজঘরে ফিরে যান আইয়ার।
আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৪১ বলে ৫৫ রান করেন আইয়ার। পরে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তিন নম্বরে নামা নিতিশ রানা। অ্যানরিখ নর্তজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১২ বলে ১৩ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।
রানা ফিরে যাওয়ার পরের ওভারে একই পথ ধরেন আরেক ওপেনার শুভমান গিল। একপ্রান্ত ধরে রাখা ইনিংসে তিনি ৪৬ বল থেকে করেন ঠিক ৪৬ রান। কলকাতার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৫ রান। অল্প সময়ের মধ্যে তিন উইকেট হারালেও, জয় ছিলো দৃষ্টিসীমানায়।
কিন্তু ১৮তম ওভারে মাত্র এক রান খরচ করে দীনেশ কার্তিককে বোল্ড করে দেন রাবাদা। ফলে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে কলকাতা আর জয়ের সমীকরণ হয় ১২ বলে ১০ রানের। ইনিংসের ১৯তম ও নর্তজের শেষ ওভারে সাজঘরে ফিরে যান কলকাতার অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান, রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
নর্তজের সেই ওভারে আসে মাত্র ৩ রান। ফলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় সাত রানের। উইকেটে তখন রাহুল ত্রিপাঠি ও সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন ত্রিপাঠি কিন্তু পরের বল ডট খেলে বসেন সাকিব। আগের ম্যাচে স্কুপ মেরে বাউন্ডারি হাঁকানোয় এই ম্যাচেও তা চেষ্টা করেন তিনি।
কিন্তু অশ্বিনের ওভারের তৃতীয় বলটিতে স্কুপ শট ব্যাটে লাগাতে পারেননি সাকিব। বল আঘাত হানে প্যাডে, সহজ সিদ্ধান্তে লেগ বিফোরের আঙুল তোলেন আম্পায়ার। ঠিক পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফে ধরা পড়েন সুনিল নারিন। তখনই কলকাতার জন্য কঠিন হয় ম্যাচটি।
শেষ দুই বলে জিততে প্রয়োজন ছয় রান। নারিন আউট হওয়ার সময় ব্যাটাররা নিজেদের ক্রস করায় স্ট্রাইক পান ত্রিপাঠি। তিনি অশ্বিনের শর্ট লেন্থের বলটি সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে হাঁকান ছক্কা। যার ফলে সহজ ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ই পায় কলকাতা।
এর আগে টস জিতে প্রথমে দিল্লিকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। শুরুটা ওত খারাপ ছিল না। পৃথ্বি শ বরাবরের মতো চালিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, ২৪ বলে ৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে।
১২ বলে ১৮ করা পৃথ্বিকে এলবিডব্লিউ করে এই জুটিটি ভাঙেন বরুণ চক্রবর্তী। এরপরই রানের গতি কমে যায় দিল্লির। ২৩ বলে মাত্র ১৮ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন মার্কাস স্টয়নিস।
শিখর ধাওয়ান উইকেটে টিকতে গিয়ে ৩৯ বল খেলে করেন ৩৬। এরপর রিশাভ পান্তও (৬) ফিরে গেলে চাপে পড়ে দিল্লি। বরুণের ঘূর্ণিতে সিমরন হেটমায়ারও ক্যাচ তুলে ফিরছিলেন, কিন্তু নো-বলে জীবন পেয়ে যান ক্যারিবীয় ব্যাটার।
যদিও বেশিদূর যেতে পারেননি হেটমায়ার। ১০ বলে ১৭ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়াস আয়ারের ২৭ বলে ৩০ রানের হার না মানা ইনিংসে ১৩৫ তুলেছে দিল্লি।
৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন বরুন চক্রবর্তী। সমান ওভারে ২৮ রান দিয়ে সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য।