মেসির বিদায়ে শেষ হলো ইউরোপিয়ান ফুটবলের স্বর্ণযুগ!

ফানাম নিউজ
  ০৮ জুন ২০২৩, ২১:৩৬

সময় অনেক কিছু পরিবর্তন করে দেয়। ইউরোপিয়ান ফুটবল এমনিতেই সব সময় জমজমাট থাকে। রোনালদো, জিদান, ফিগো, কার্লোস, কাকা, রাউলদের নিয়ে গ্যালাকটিকো সাজিয়েছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনায় তখন ছিলেন রোনালদিনহো, রিভালদো, কার্লোস পুয়োল। ইংল্যান্ড ফুটবলে ডেভিড বেকহ্যাম, ওয়েন রুনি, মাইকেল ওয়েনদের মতো তারকা। জার্তানি, ইতালিয়ান ফুটবলও ছিলো তারকায় ঠাসা।

তখনকার সময়ের তারকাদের পতনের ধাক্কাটা ফুটবল প্রেমীদের গায়ে লাগতে দেননি মেসি, রোনালদো। এই দু’জনের আবির্ভাব প্রায় একই সময়ে। আগে এসেছেন রোনালদো, পরে মেসি। তবে দু’জন একই সময়ে শাসন করলেন ইউরোপের ফুটবলকে। তাদের সময়ে বার্সায় বসেছিলো তারার মেলা। জাভি, ইনিয়েস্তা, বুস্কেটস, ফ্যাব্রেগাস, আলবাদের মত তারকাদের নিয়ে এক সময় ইউরোপের কেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলে পরিণত হয়েছিলো বার্সেলোনা।

সময়ের সাথে সাথে তারকারা বিদায় নিতে শুরু করেন। জাভি গেলেন, ইনিয়েস্তাও চলে গেলেন ইউরোপের বাইরে। অন্য তারকাদের যারা কিছুদিন ঝলক দেখিয়েছিলেন তাদেরও বিদায় ঘটেছে। কিন্তু থেকে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ২০০৭-০৮ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি এ দু’জনের রাজত্বই চলেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে।

মাঝে কিছু তারকা যে আসেননি তা নয়। করিম বেনজেমা, নেইমার, লেওয়ানডস্কি, সালাহ, সাদিও মানে, কিলিয়ান এমবাপে এবং সর্বশেষ এই তারকার মেলায় সংযোজন আরলিং হালান্ড।

কিন্তু রাজদণ্ডটা এখনও পর্যন্ত মেসি কিংবা রোনালদোর হাতেই ছিল। ছিল বলা হচ্ছে, ঠিক আগামী মৌসুম থেকে এই রাজদন্ডের বাহক পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইউরোপের ফুটবল ছেড়ে চলে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো ম্যানইউ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবের প্রিমিয়ার লিগে। বছরে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দিয়েছেন সৌদি ক্লাব আল নাসরে।

বার্সেলোনার অর্থনৈতিক ঝামেলার কারণে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। তবুও তো ইউরোপে ছিলেন। কিন্তু তারও সৌদি সংযোগ ঘটে যায়। সৌদি ক্লাব আল হিলাল ১ বিলিয়ন ডলারের ডালা সাজিয়ে মেসির সামনে মেলে ধরে। এত বিশাল অংকের অর্থ, কোনো ব্যক্তি হয়তো কখনো স্বপ্নেই দেখতে পারেন কেবল। মেসি কেন যে কোনো ফুটবলারেরই স্বপ্ন থাকবে, সারাজীবন খেলে-টেলে এমন একটি অ্যামাউন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্ত করার।

কিন্তু মেসির চিন্তা একটু ভিন্ন। প্যারিসে ২ বছর থাকলেও পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না। নিজেই সেটা জানিয়েছেন। সৌদি আরবে যাওয়ার পথে মেসির সামনে বড় বাধা ছিলেন তার পরিবার। কারণ, সৌদিতে গেলেও পরিবারকে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বার্সায় নিজের স্থায়ী ঠিকানা গড়ে নিয়েছিলেন আগেই। ক্লাবের প্রতিও টান আছে। পরিবারেরও চাওয়া। সব মিলিয়ে বার্সায় ফিরতে চেয়েছিলেন মেসি।

কিন্তু ক্লাবের নানা জটিলতার কারণে বার্সা থেকে রেজিস্টার খেলোয়াড় হওয়ার গ্যারান্টিটুকু পর্যন্ত পাচ্ছিলেন না। অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চান না মেসি। এ কারণে তিনি বার্সা ছাড়া বাকি দুটি প্রস্তাব নিয়ে টেবিলে বসলেন। নিজে নিজে অ্যানালাইসিস করলেন। সবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মিয়ামিকেই বেছে নিলেন।

আল হিলাল তো ১ বিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছিলো। ইন্টার মিয়ামি কত দেবে? এ বিষয়টা প্রকাশ হয়নি। তবে, কিছু কিছু ইঙ্গিত তো পাওয়া যাচ্ছে মেসি কী কী সুবিধা পাবে। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার পেছনে একযোগে কাজ করেছে অ্যাপল টিভি, অ্যাডিডাস এবং এমএলএস লিগ কর্তৃপক্ষ।

তিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে গেলেন মেসি। ক্লাব থেকে যে অর্থ পাবেন, পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যা পাবেন- সব কিছু মিলিয়ে মেসির প্রাপ্তি সৌদি আরবের আল হিলালের চেয়ে কম নয়, বরং বেশিই হবে। সঙ্গে পেশাদার ফুটবলের চাপ থাকবে না। পরিবার নিয়ে নিঃসংকোচে জীবন-যাপন করতে পারবেন।

তো লিওনেল মেসির ইউরোপ ছাড়াটা নিশ্চিত হয়ে গেলো। তার আগেই ইউরোপ ছাড়ার নিশ্চিত ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন করিম বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে সৌদি ক্লাব আল ইত্তিহাদে বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে যোগ দিলেন বেনজেমা। যিনি বর্তমান ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ফুটবলার।

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ফুটবলকে পুরোপুরি বিদায় জানিয়ে ফেলেছেন। ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও। সার্জিও বুস্কেটসেরও সৌদি আরবে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।

সবচেয়ে বড় কথা ২০০৩ সালের পর এই প্রথম ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে জমজমাট আসর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোনালদো এবং মেসিকে ছাড়াই। নেইমার, এমবাপে, আরলিং হালান্ড থাকার পরও ইউরোপিয়ান ফুটবল যে তাদের সোনালি যুগটা পার করে ফেলেছে, তা বলাই যায় এখন।