শিরোনাম
ফাইনাল হলো ফাইনালের মতোই। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল আবাহনী ও মোহামেডান। কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।
রুদ্ধশ্বাস এক লড়াই নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ ড্র থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ালো। সেখানেও দুই দল সমান। একটি করে গোল করলো মোহামেডান আর আবাহনী। ৪-৪ সমতায় থাকা ম্যাচটি গড়ালো টাইব্রেকারে।
সেই টাইব্রেকারে ভাগ্য খুললো মোহামেডানের। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আবাহনীকে ৪(৪)-৪(২) ব্যবধানে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হলো সাদাকালোরা।
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে যেদিন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে দেয় আবাহনী সেদিন থেকেই দেশের ফুটবল অঙ্গনে সবার মুখে ‘১৪ বছর’। কারণ, আবাহনী সেমিফইনাল জিতে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় মোহামেডানের।
২০০৯ সালে পর মোহামেডান যে ফেডারেশনে কাপ ফুটবলের ফাইনালেই উঠতে পারেনি। এ ম্যাচ ঘিরে গত একপক্ষ ধরে ঘরোয়া ফুটবলে যেন ফিরে আসে আশি-নব্বই দশকের উত্তেজনার ঘ্রাণ। হয়েছেও তাই।
১২০ মিনিটের লড়াই যখন শেষ হয় ৪-৪ গোলে তখন ঠিক ১৪ বছর আগের মতো দুই দলের ফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে এবং সেই দিনের মতোই আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান।
মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ মানেই মুহূর্তে মুহূর্তে নাটক। এই ফাইনালেও হয়েছে তাই। অথচ প্রথমার্ধের খেলা দেখে অনেকের ধারণা ছিল ম্যাচটি হয়তো সহজেই জিতে নেবে আবাহনী এবং ফেডারেশন কাপের শিরোপা ধরে রাখবে তারা।
কিন্তু যারা মোহামেডান-আবাহনীর ফাইনালের হাড়ির খবর রাখেন তারা আশা ছাড়েননি। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে জেঁকে বসেছিলেন একটা নাটকীয় ফাইনালের আশায়। সে আশা পূর্ণ করেই ঘরে ফিরেছেন দর্শকরা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচটি মোহামেডান ৪-৪ গোলে সমতায় নিয়েছিল। তারপর টাইব্রেকার।
বড় ম্যাচ। ১৬ মিনিটেই লিড-আবাহনী সমর্থকদের একটি ট্রফি পাওয়ার স্বপ্ন জাগিয়েছিলেন তরুণ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। ৪৪ মিনিটে কলিন্দ্রেস যখন ব্যবধান ২-০ করেন তখন তো মোহামেডান গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা।
সেই ম্যাচ ভোজবাজির মতো বদলে দেন সোলেমান দিয়াবাতে নামের এক বিদেশি। মালির এই ফরোয়ার্ড মোহামেডানের অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব কাঁধে অসাধ্য সাধন করেন একাই চার গোল করে।
৬৫ ও ৬০ মিনিটে গোল করে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ২-২ সমতা। এর পর ৬৬ মিনিটে এমেকার গোলে আবার লিড আবাহনী। ৮৩ মিনিটে সোলেমান দিয়াবাতে আবার নায়ক-গোল করে ৩-৩ সমতার ম্যাচটি নিয়ে যান অতিরিক্ত সময়ে। ১১৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় মোহামেডান। সোলেমান দিয়াবাতে বল নিয়ে বক্সে ঢুকলে তাকে ফাউল করেন আবাহনীর গোলরক্ষক সোহেল।
স্পটকিকে সোলেমান লক্ষ্যভেদ করলে প্রথম ম্যাচে লিড পায় মোহামেডান। তবে শেষ বাঁশির কয়েক মিনিট আগে আবাহনীর জন্য রহমত হয়ে আসেন রহমত মিয়া। তার গোলে সমতা আসে ম্যাচ ৪-৪ এ। ফাইনাল নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে।
আবাহনীর দুই সেরা খেলোয়াড় বিশ্বকাপ খেলা কলিন্দ্রেস ও ব্রাজিলের রাফায়ের শট রুখে দেন মোহামেডানের বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু।
মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের গোল রুখে দেন আবাহনীর সোহেল। মোহামেডানের ৫ শটের মধ্যে চার গোল করেন সোলেমান দিয়াবাতে, আলমগীর রানা, রজার ও কামরুল। আবাহনীর দুই গোল করেছেন এমেকা ও ইউসেফ।
১২০ মিনিটের ম্যাচে দুই দলের চার গোল করে হয়েছে ৮টি। টাইব্রেকারে আরো ৬ টি। ১৪ বছর পর হওয়া মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যেকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালেও বল জালে জড়ালো ১৪ বার।
কামরুলের কিক আবাহনীর জাল কাঁপাতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে মোহামেডান শিবির। ১৪ বছর আগে শেষবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলেছিল মোহামেডান। তখন আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর সেই আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হলো মোহামেডান।
দীর্ঘদিন ঘরোয়া ফুটবলের শিরোপা না পাওয়া সাদা-কালো শিবির আবার জেগে উঠলো ফেডারেশন কাপ জিতে। ঢাকার বাইরে দুই জনপ্রিয় দলের প্রথম ফাইনাল বাজিমাত করলো মোহামেডান।
ফাইনালসেরার পুরস্কার জিতেছেন মোহামেডানের অধিনায়ক চার গোল করা সোলেমান দিয়াবাতে। তিনিই প্রথম ফুটবলার যিনি হ্যাটট্রিক করলেন ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে।