শিরোনাম
সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়! বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে কখনও দ্বিপাক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ, প্রথমবার দেখা। আর সেই দেখাতেই হয়ে গেলো ইতিহাস।
মিরপুরে রোববার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রোমাঞ্চকর এক লড়াই হলো। যে লড়াইয়ে ইংলিশদের ৪ উইকেট আর ৭ বল হাতে রেখে হারালো বাংলার দামাল ছেলেরা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিলো সিরিজ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামিয়ে ইতিহাস গড়লো সাকিব আল হাসানের দল।
বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল মোটে ১১৮ রানের। সহজ হলেও অবশ্য শেরে বাংলার পিচে সহজে ধরা দেয়নি জয়।
উইকেটের মন্থর গতি আর আনইভেন বাউন্সকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখে ইংলিশরা। কিন্তু এই বাংলাদেশ তো অন্যরকম, পিচের চরিত্র বুঝে খেলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম দুই ওভারে ১৫ রান তোলেন লিটন দাস আর রনি তালুকদার। কিন্তু লিটন চলতি সিরিজে আরও একবার ব্যর্থতার পরিচয় দেন। দায়িত্বজ্ঞানহীন পুল খেলতে গিয়ে স্যাম কারানকে উইকেট দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার (৯ বলে ৯)।
এরপর রনিও (১৪ বলে ৯) খেলেন উচ্চাভিলাষী শট। জোফরা আর্চারকে পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েন মিডঅনে। ২৭ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩২ রান।
তৌহিদ হৃদয় খেলছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে তার ৩১ বলে ২৯ রানের একটি জুটিও গড়ে উঠে। কিন্তু অভিষিক্ত ইংলিশ লেগস্পিনার রেহান আহমেদ বল হাতে নিয়েই হৃদয়কে ফাঁদে ফেলেন। রেহানের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন হৃদয় (১৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৭)।
এরপর প্রমোশন পেয়ে ওপরে উঠা মেহেদি মিরাজ ১৬ বলে ২০ রানের কার্যকর এক ইনিংস খেলে দিয়ে যান। তবে এরপর সাকিব (০) আর আফিফ হোসেনকে (২) দ্রুত সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল ইংলিশরা।
তবে শান্ত বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত। ৪৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৪৬ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ (৩ বলে অপরাজিত ৮)।
এর আগে বোলাররা তাদের কাজটা করে দিয়েছেন। অফস্পিন ভেল্কিতে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের শেষ বলে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১১৭ রানে।
মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টসভাগ্যটা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
শুরুতেই ইংলিশদের চাপে ফেলে বাংলাদেশ। ৮ বলে ৫ রান করা ডেভিড মালান ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদের শিকার হন। ক্যাচ নেন হাসান মাহমুদ। এরপর ফিল সল্ট চালিয়ে খেলছিলেন। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫০ রান তুলে নেয় ইংল্যান্ড।
তবে পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আঘাত হানেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন ভয়ংকর হতে চাওয়া সল্টকে (১৯ বলে ২৫)। ঘূর্ণি জাদুতে পরাস্ত করে সাকিব নিজেই নেন ফিরতি ক্যাচ।
এরপর অষ্টম ওভারে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে (৪) চোখ ধাঁধানো এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। মঈন আলি (১৭ বলে ১৫) চাপ সামলাবেন কি, তার ঠিক পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন। ৭ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকতে থাকে ইংল্যান্ড।
সেখান থেকে স্যাম কারান আর বেন ডাকেট হাল ধরতে চেয়েছিলেন। ৩২ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। কিন্তু ইনিংসের ১৫তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ জোড়া ধাক্কা হানেন ইংলিশ শিবিরে।
মিরাজের টার্ন বুঝতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন স্যাম কারান (১৬ বলে ১২) আর ক্রিস ওকস (০)। ৯১ রানে ৬ উইকেট হারায় ইংলিশরা।
স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল বেন ডাকেট। শেষ ওভার পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মারতে গিয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে দেন ডাকেট। ২৮ বলে ২৮ করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
মিরাজ ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট। একটি করে উইকেট সাকিব, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আর মোস্তাফিজের। আফিফ, শান্তসহ সাকিব আজ বাংলাদেশের ৮ বোলার ব্যবহার করেছেন।