সেমিফাইনালের ‘চাবিকাঠি’ এই তিন গোলরক্ষকের হাতে!

ফানাম নিউজ
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৩৫

এবারের বিশ্বকাপের চমক, অবশ্যই তিন গোলরক্ষক। যাদেরকে এরই মধ্যে সেরা গোলরক্ষকের খেতাব দেয়া হয়ে গেছে। তিনজনই ম্যাচের পর ম্যাচে বাঁচাচ্ছেন নিজেদের দলকে। তিনটি দলই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে এই তিন গোলরক্ষকের কারণে। তারা হলেন কাতার বিশ্বকাপের সেরা তিন নায়ক ক্রোয়েশিয়ার ডমিনিক লিভাকোভিচ, আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এবং মরক্কোর ইয়াসিন বোনো।

ডমিনিক লিভাকোভিচ ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক। কতটা দক্ষ তার হাত, সে পরিচয় সম্ভবত আর মুখ ফুটে দেয়ার প্রয়োজন নেই। নকআউটের দুটি ম্যাচেই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, নিজের দক্ষতার প্রমাণ। দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপান এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল। দুই ম্যাচেই টাইব্রেকারে শট ঠেকিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে উঠেছেন লিভাকোভিচ।

জাপানের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তিনটি পেনাল্টি বাঁচিয়েছিলেন লিভাকোভিচ। তার হাতেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে জাপানিদের। সেখানেই শুধু থেমে থাকেননি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আরও একবার দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

১২০ মিনিটের খেলায় নেইমারদের ১৩টি শট বাঁচিয়েছেন তিনি। এরপর টাইব্রেকারে রদ্রিগোর শট প্রতিহত করেছেন। শেষে মার্কুইনহোস তাকে ফাঁকি দিতে গিয়ে বল লাগিয়েছেন সাইডবারে। লিভাকোভিচের দৃঢ়তায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে নেইমারদের।

সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া যাদের বিরুদ্ধে খেলবে সেই আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজও এবার রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। বিশ্বকাপের আগে থেকেই মার্টিনেজের গোলকিপিং নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। যে কোনো কঠিন মুহূর্তে দলকে বাঁচিয়ে দিতে পারেন তিনি। ২০২১ কোপা আমেরিকার শিরোপা মেসির হাতে উঠেছিলো মার্টিনেজের দৃঢ়তার কারণেই।

এবারও নিজের যোগ্যতা দেখিয়েছেন এমি। কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা হারিয়েছে নেদারল্যান্ডসকে। এখানেও টাইব্রেকারের নায়ক হলেন মার্টিনেজ। নেদারল্যান্ডসের প্রথম দু’টি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন তিনি। যে দুটি শট বাঁচানোই মেসিদের তুলে দিয়েছে সেমিফাইনালে।

তবে, লিভাকোভিচ কিংবা মার্টিনেজ- এদের সবাইকেই যেন ছাড়িয়ে গেলেন এবারের বিশ্বকাপের বড় চমক মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কানরা। এই দলটির ধারাবাহিক সাফল্যের পিছনে অন্যতম নায়ক বোনো। বিশ্বকাপে মাত্র ১টি গোল হজম করেছেন তিনি। তাও সেটি সতীর্থের আত্মঘাতী গোলের কারণে।

দ্বিতীয় রাউন্ডে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়েছে মরক্কো। সেখানে স্পেনের তিনটি শটই ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন বোনো। নকআউটে মাঠে নামার আগে ১০০০ পেনাল্টি শর্ট প্র্যাকটিস করেছিলো স্পেন। কিন্তু বোনোকে ফাঁকি দিয়ে একটি শটও মরক্কোর জালে জড়াতে পারেনি স্প্যানিশরা।

পর্তুগালের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেও গোলের নিচে পাহাড়ের মত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। রোনালদো, রামোস, ফার্নান্দেজদের একের পর এক শট ঠেকিয়ে মরক্কোকে নিশ্চিত গোল থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি।

সেমিফাইনালের আরেক গোলরক্ষক হুগো লরিসের কথা আলাদা বলার প্রয়োজন নেই। ফ্রান্স গোলরক্ষক এমনিতেই একবার বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেবারও ফরাসীদের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। এবারও দলকে সেমিফাইনালে তুলে এনেছেন লরিস অ্যান্ড কোং। মাঠে এমবাপে-জিরুরা লড়াই করছেন, প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াচ্ছেন। যে কারণে বড় কোনো পরীক্ষা এখনও দিতে হয়নি লরিসকে। তবে, ফ্রান্সের সাফল্যে তিনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন বড় নায়ক।

কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপেরা নিজেদের সেরা খেলা দেখাচ্ছেন। দলগত খেলা দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দুর্দান্ত কিছু গোল। তবে, পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে ঠিকই নিজেদের নায়কে পরিণত করছেন লিভাকোভিচ, মার্টিনেজ, বোনোরা। সেমিফাইনালেও জয়-পরাজয়ের অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেন তারা। এখন দেখার বিষয়, কারা হবেন সেমির নায়ক?